পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৩৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কুশল পাহাড়ী ভদ্রের শেষে মনোহরপুর বেড়াতে গিয়েছিলুম সেবার। কাছেই অরণ্যময় স্বন্দরগড় স্টেট। মনোহরপুর স্থানটা চারিধারে শৈলাচলে ঘেরা। বেড়াতে এসেছিলুম দুদিনের জন্তে, এখানে থাকবো ঠিক করেছিলুম ডাকবাংলোয়। কিন্তু আলাপ হয়ে গেল স্থানীয় এক বাঙালী ভক্র লোকের সঙ্গে । তিনি নিয়ে গেলেন র্তার বাসায়, ছাড়লেন না কিছুতেই । আমি বল্লাম—আপনার অস্ববিধে হবে। হয়তো বেশিদিন থাকবে । তিনি মৃদু হেসে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বল্লেন—আ: বাঁচলুম। ছমাসের বেশিও কি থাকবেন । -नl । —থাকুন না । --न । —তবে কেন "কিন্তু করচেন ? প্রবাসে বাঙালীর বন্ধু বাঙালী । স্বদেশে তা নয় । জানেন তো সঞ্জীববাবুর উক্তি? যতদিন ইচ্ছে থাকুন। নিজের বাড়ী মনে ভাববেন। মনোহরপুর থেকে ন’ ক্রোশ দূরে কুশল পাহাড়ীর ভৈরব থান—অর্থাৎ দেবতার ক্ষেত্র। একদিন মন্মথবাবু বল্লেন—যাবেন সতীশবাবু একটা খুব ভালো জায়গায় ? —কোথায় ? —ভালো একজন সাধু আছেন ওখানে। বড় জঙ্গল । রাস্তাও দুর্গম। গরুর গাড়ীতে যেতে হবে । —আমার সাধুসল্লিসিতে দরকার নেই। জঙ্গল আছে তো ? - || —তবে যাবো | সুন্দরগড় আরণ্য-প্রকৃতির লীলানিকেতন। পথে পথে করম গাছের ফুলের ঝরা পাপড়ি বিছানো। লম্বা-ঠোঁট ধনেশ পাখী ও বনটিয়া ডালে ডালে বেড়াচ্চে । কচিৎ কোনো পৰ্ব্বতচূড়ায় প্রভাতের সোনালী রোদ এলানো, কচিৎ কোনো পাৰ্ব্বত্য ঝর্ণার জলের ধারে লোহাজালি ফুল ফুটে পাথর ঢেকে ফেলেচে। পথেরও শেষ নেই, অরণ্যেরও শেষ নেই, মুক্ত শৈলমালবেষ্টিত ভূমিত্ররও শেষ নেই, প্রান্তরেরও শেষ নেই। বনে বনে ময়ূর, বনে বনে কোটুর, তালুক, লেপার্ড । গরুর গাড়ী চলেচে মন্থর গতিতে। কখনো ঢালু পাহাড়ীপথ উঠচে আমলকী গাছের ফলভারানত শাখাপ্রশাখার ছই ঘেষে। কখনো ফুল ছড়ানো উপত্যক বেয়ে নামচে জলভরা নালার দিকে। কালীপাহাড়ীর পৃঙ্গ ঠেলে উঠেচে ঘনবনের ওপরে ভিক্সভিয়াসের মোচাকৃতি শিখরদেশের মত । সকালে গরুর গাড়ী ছাড়া হয়েছিল । সঙ্গে ছিল চিড়ে, চিনি, কলা, দই, পাকা পেঁপে,