পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৩৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কুশল পাহাড়ী আজ আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। কোন অজানা দিগন্তে সে মিলিয়ে গিয়েছে বহুকাল আগে ! জীবনটা কেন এত বড় ফাকি, এত বড় মিথ্যে, এত বড় জুয়োচুরি ? —আরে, গাঙ্গুলীবাবু যে ! কোথায় ছিলেন এতদিন ? কেশব চমকে পিছন ফিরে চেয়ে দেখলেন। একজন মধ্যবয়স্ক টিকিটচেকার, ক্রু দলের মোড়ল । ওর নামটা তিনি জানতেন, এইমাত্র তিনি হঠাৎ ভুলে গেলেন । বুড়ো হয়েছেন, মুখ দেখে এখন আর ভাল বলতে পারেন না । —বাড়ী ছিলাম ভাই । --তারপর এখানে কি মনে করে ? বৌদির সঙ্গে ঝগড়া করে নাকি ? কেশবের মুখ বিবর্ণ হয়ে গেল । কাষ্ঠহাসি হেসে বললেন—হঁ্যা ভাই—সে-সব, তাই বটে। —চলুন, সাহেবগঞ্জ পর্যন্ত বেড়িয়ে আসা যাক। চেক্‌ করতে বেরিয়েছি। চলুন আমার সঙ্গে । সেকেন ক্লাসে তুলি দিচ্ছি। আম্বন— —খাবো কোথায় । —আপনি খান নি এখনো । বৰ্দ্ধমানে খাওয়াবে চলুন ! জিনিসপত্র কিছু আছে ? –কিছু না । —তবে চলুন । এক্সপ্রেস এসে পড়ল। বৰ্দ্ধমানের ক্রুদের ঘর থেকে সঙ্গী লোকটির জন্যে ভাত-তরকারি এল । রাত তখন সাড়ে সাতটা । দুজনে ভাগ করে খেলেন । সঙ্গী ব্রাহ্মণ, নাম পঞ্চানন বাড়ুযো, বাড়ী জয়নগর-মজিলপুর । পেট ভরে ভাত খেয়ে কেশব গঙ্গুলীর যেন ধড়ে প্রাণ এল । উ, সোজা ক্ষিদেট পেয়েছিল ? কি মুন্দর বর্ষা-সজল বাতাস দুদিকের মাঠে-বনে বইছে! কুরচি ফুলের স্ববাস মাঝে মাঝে আসে বাতাসে । এই সব বন, এই অন্ধকার আকাশ, নক্ষত্রের দল কেমন যেন তাকে বহুদূরের সঙ্গীহীন একক জীবনের বাণী এনে দিচ্ছে! নিঃসঙ্গ জীবনে কতদূরে কোথায় যেন যাচ্ছেন তিনি। আর বাড়ী ফিরবেন না। আর মুক্তকেশীর হাতে হাটের থলে তুলে দেবেন না। তার সংসার করা ফুরিয়ে গিয়েছে । অন্ধকারের মধ্যে দিয়ে নিরুদ্দেশের দিকে যাত্রা শুরু করলেন আজ তিনি । இ. - সেকেণ্ড ক্লাস গাড়ীতে তিনি একা । বেশ লাগছে অনেক দিন পরে । গত এক বছর শুধু মাথায় মোট করে হাট ঘুরেছেন, বাজার করেছেন, মাখার ঘাম পায়ে ফেলে রেশনের আটা, চিনি, কেরোসিন তেল এনেছেন—যাদের জন্যে, তারা আজ এই তিয়াত্তর বছর বয়সে তাকে পারলে ঘরের বার করে দিতে পয়সার তার দরকার নেই। পয়সা সব মুক্তকেশীর হাতে থাকুক। র্তার পয়সাকেই ওদের দরকার, তাকে নয় তো ? বেশ, পয়সাই রইল, চললেন তিনি । ...সাইৰিয়া ।