পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৩৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\రిలీట్ర বিভূতি-রচনাবলী মুক্ত বললে—বা, চমৎকার! খোপায় গুজবো । তারপর চুপি চুপি বললে—কিন্তু সে ফুল তোমায় নিজের হাতে তুলে এনে দিতে হবে। —ঠিক এনে দেবো। খাওয়া হয়ে যাকৃ। যাবার সময়ে নিয়ে আসবো— পঞ্চাশ বছরের পার থেকে সেই প্রথম যৌবনের ফুটন্ত কদমফুলের স্ববাস আজকার এই বর্ষীসজল বাতাসে বৃষ্টির ছাটের সঙ্গে যেন ভেসে আসে । সে বর্ষাদিনের সুন্দর অপরাইট, পাহাড়ের নিচের সেই পাকুড় গাছটি আজি স্বপ্ন হয়ে গিয়েছে। সে মুক্তকেশীও.. কখন যেন মুক্ত এসে ওর শিয়রে দাড়ালো। সপ্তদশী তরুণী সুন্দরী মুক্তকেশী। হাসিতে মুক্তোর মত দাতগুলি ঝকঝঞ্চ করছে যেন। স্নেহভরে মাথার চুলে হাত বুলিয়ে বললে—তুমি কদম ফুল এনে দেবে তো ? তুমি এনে দিলে আমি খোপায় পরবো–ভুলো না যেন, ভুলো না । তারপর আবার চোখ নিচু করে বলছে—রোজ একখানা করে চিঠি দিতে হবে কিন্তু । আমি থাকতে পারবো ন+–সত্যি বলো, আমাকে ছুয়ে—দেবে তো ? পরক্ষণেই বিরলদন্তী পঙ্ককেশী বৃদ্ধা মুক্তকেশী হাটুর ওপর গামছা পরে তাকে বাট উচিয়ে মারমুখী হয়ে বলছে—বেরো, বেরো, আপদ দূর হও বাড়ী থেকে। ম'লেই বাচি—মরণ হবে কবে তোমার ? যম নেয় না কেন ? ঘুমের মধ্যেও চমকে উঠলেন কেশব । মস্ত একটা বাকুনি লাগলো গাড়ীটায়। অনেক রাতে তিনপাহাড় স্টেশনে এসে গাড়ী দাড়ালে তিনি নেমে পড়লেন। দৌড়ে ছুটে গেলেন প্লাটফর্মের পশ্চিম প্রাস্তের সেই বুড়ো ঘোড়ানিম গাছটার দিকে । আধ-অন্ধকারে গাছের তলায় খুজে দেখলেন । - —সান্ট-বাবা—সান্ট ! আজ কোথায় গেল খোকা ? পঞ্চাশ বছর আগে সে এই ঘোড়ানিম গাছটার তলায় যে খেলা করতো ! যেন শাস্তি পেলেন কেশব গাঙ্গুলী যৌবনের হারানো দিনগুলোর মধ্যে আবার ফিরে এসে, স্তিনপাহাড়ের নির্জন প্রান্তরে, প্ল্যাটফর্মে, অন্ধকার আকাশের তলায় এসে । তিনি আবার ভারিশ বছরের যুবক কেশব গাঙ্গুলী, এই ইন্টিশনের তার বাবু-বুকে কত আশা, কত বল, কত উৎসাহ চোখে কত স্বপ্ন ! তার খোকা সান্ট আছে কাছে, তার তরুণী মা মুক্তকেশী আছে। সব তিনি ফিরে পেয়েছেন । —সান্ট, আয় আমার কোলে আয়। রামদেও এখন তোকে বাসায় নিয়ে যাবে না। খেলা করে বেড়া প্লাটফর্মে । - প্লাটফর্মের ঘোড়ানিম গাছটার তলায় দুদিন কেশব গাঙ্গুলী শুয়ে রইলেন। নির্জন স্টেশন, বিশেষ কেউ লক্ষ্য করতো না। সত্যি, কি অপূৰ্ব্ব আনন্দে কাটলে এই দুটো দিন। সব ফিরে পেয়েছিলেন আবার।