পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৩৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

එ8• বিভূতি-রচনাবলী শাখা ভেঙে ও সিন্দুর মুছিয়ে নিয়ে আসবে, কেউ রাজী হচ্চে না, সবাই কাচে, তিনিও কাঠের মত দাড়িয়ে আছেন—এইটুকু মাত্র ছবি আমার মনে আছে। রামলাল মামার একমাত্র শিশুপুত্রকে দিদিম গিয়ে কোলে তুলে নিলেন রোয়াক থেকে । তার ম৷ কিছুদিন পরে তাকে নিয়ে বাপের বাড়ী চলে গেলেন। তবে কোনোদিন স্বামীর ভিটেতে তিনি পদার্পণ করেছিলেন কিনা, আমার জানা নেই । ছেলেটি শুনেচি বড় হয়ে পশ্চিমে কোথায় চাকরি করে এখন । g সেই জঙ্গলের মধ্যে এদিক ওদিক খানিকটা ঘুরে আবার চলাচলের রাস্তায় এসে উঠেচি– দেখি যে পরেশনাথ অসচে। পরেশনাথ সম্পর্কে আমার মামা হয়—আমার চেয়ে বেশি বড় নয়—অথচ এমন বুড়ো হয়ে গেল কি করে ? ও কাছে এলে বল্লাম—মামা যে ? চিনতে পারো ? কেমন আছ ? পরেশনাথ আমাকে দেখে মস্ত একটা ই করলে ৷ বল্লে—কোথায় যেন দেখেচি, চেনা চেনা মুখ— আমি হেসে বল্লাম—বেশ ! আমি কানাই—সতীনাথ চকত্তির ভাগনে ! সে উদাসীন এবং আগ্রহশূন্তভাবে বল্লে—ও । ব্যস্ । অথচ আমি ওর সঙ্গে একত্র খেলা করেচি ছেলেবেলায় । এতদিন পরে ছেলেবেলার সঙ্গী দেখে ওর মনে এতটুকু উৎসাহ বা আনন্দ দেখলুম না । কেমন যেন হয়ে গিয়েচে । বল্লাম—ভাল আছ ? জিজ্ঞাসার কোনো প্রয়োজন ছিল না, তবুও বলতে হল ভদ্রতার খাতিরে । সে বল্লে—আর ম’লেই বাচি । বলেই সে পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছিল, আমি বল্লাম—দাড়াও, দাড়াও । আমায় চিনতে পারলে ? —হঁ্যা, তুমি কানাই । —তোমার কোনো অশ্বখ হয়েচে ? —হাপানিতে ভুগচি । —বটে। চিকিৎসা হচ্চে ? - —গঙ্গাতীরে হবে, চিতের বিছানায় যেদিন শোবো খেতেই পাইনে—চিকিচ্ছে । --আচ্ছা, কেউ আছে নাকি এ পাড়ায় পুরনো দলের মধ্যে ? —বড় জ্যাঠাইমা আছেন। একা থাকেন। বড় জ্যাঠাইমা মানে দাদজীর দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী। তাকে বাল্যকালেই আমি বৃদ্ধ দেখোচ । তিনি এখমও বেঁচে আছেন ? রামলাল মামাকে ইনিই হাতে করে মানুষ করেছিলেন তার আপন মা মারা যাওয়ার পর। যখন রামলাল মারা যান, তখনি ইনি বৃদ্ধা। ইনিই উঠোনে পড়ে সেদিন গড়াগড়ি দিয়ে কেঁদেছিলেন আমার মনে আছে । আজ বিরাশি তিরাশি বছর