পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৩৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কুশল পাহাড়ী ●8ፃ এরোড্রোমের সাহেব-মবো আসে ঐ দিন বেড়াতে—তাদের চা-টা দিতে হবে। আমি ঠিক যাবে। —মণ্ট, নীলিম, অনিমাকে নিয়ে যাবেন কিন্তু। চাকুলিয়া এরোড্রোমের নানা জায়গা ঘুরে কেনেডি বলে এক সাহেবের বাংলোয় হাজু মোটর নিয়ে হাজির হল। কেনেডি এরোড্রোমের গ্রাউণ্ড অফিসার এবং এনজিনিয়ার। হাজুর সঙ্গে বিশেষ বন্ধুত্ব আছে বোঝা গেল। আমাকে, বিশেষ করে স্বহাসিনীকে, খুব খাতির করলে। স্বহাসিনী তো ভয়ে ও সংকোচে জড়সড়। ছেলে মেয়েদের বিস্কুট, পনির, কলা প্রভৃতি খেতে দিলে। আমাদের দিলে কফি । দেশী গান শুনতে নাকি বড় ভালবাসে শুনে আমি স্থহাসিনীকে একটা গান করতে বললাম। স্বহাসিনী গরীবের ঘরনী বটে, কিন্তু ভারি স্বন্দর ওর কণ্ঠ, তবে সময়াভাবে চর্চা না হওয়ায় নতুন আর কিছু শিখতে পারে নি । রজনী সেনের একটা গান ও কেমন চমৎকার গাইলে। কেনেডি শুনে খুব খুশি । আমি বল্লাম, যেদিন আমাদের বাডী যাবে কেনেডিকেও নিয়ে যেও । স্বহাসিনীও তাই বল্পে । কেনেডিকে আমি স্বহাসিনীর অনুরোধ বুঝিয়ে দিলাম। কেনেডির খুশি আর ধরে না । স্বহাসিনীকে বন্ধে—মই ইণ্ডিয়ান সিটার, আই মাসুকীপ ইওর ইনভিটেশন। হাজুর বাংলোয় যখন আমরা ফিরে এলাম, তখন রাত আটটা। তখুনি আমাদের খাবার জায়গা হল। ঘি-ভাত, মাংস, মাছ, চাটনি, পায়েস ও সন্দেশ। বেশ রান্না। ঘি খুব ভালো! মুঙ্গের থেকে কে একজন ওকে এই ঘি নাকি এনে দেয় । খাওয়া হয়ে গেলে স্টেশন-ওয়াগন তৈরী হয়ে এল আমাদের জন্যে । সকলের কাছে বিদায় নিয়ে মোটরে চড়ে আমরা রওনা হলাম। আবার সেই অরণ্যপথ ও মুক্ত প্রান্তর, জ্যোৎস্নময়ী রজনী। আমাদের মন আনন্দে পূর্ণ। সমস্ত পথ মুহাসিনী কেবল সেই কথা বলতে বলতে এলো । বল্লে—আগে ভেবেছিলাম বড়লোকের কাণ্ড-কারখানা, না জানি কি বিপদেই পড়বে। গিয়ে । কিন্তু এমন অমায়িক সবাই! দিদি তো মাটির মানুষ । তেমনি ঠাকুর-পো । সাহেবটাই বা কি ভাল লোক ! ওদের কিন্তু ভাল করে খাওয়াতে হবে রবিবারে । আমি ছেলেমেয়েদের আসতে বলে দিয়ে এসেচি । আমরা রাত দশটার সময়ে এসে নিজেদের খোলার ঘরের বাসায় পৌঁছলাম। উৎসাহ ও আনন্দে স্বহাসিনী সারারাত প্রায় জেগেই রইল এবং শুধুই এরোড্রোম-ভ্রমণের নানা ঘটনার পুনরাবৃত্তি করতে লাগলো। সে জীবনে কখনো এমন মোটর-ভ্রমণ করে নি, এমন স্থখাদ্য খায় নি, এত বড় দলের লোকের সঙ্গে মেশেনি। সবটা মিলিয়ে আজ তার জীবনের একটি অতি স্মরণীয় দিন। আমার তৃপ্তি এই ভেবে যে, আমার নিজের কোনো দিনও ক্ষমতা হত না ওকে এভাবে আনন্দ দিই—তবুও অপরের দৌলতে যা হয় একটু আমোদ আহলাদের মূখ দেখে নিলে একদিন । —আচ্ছা, ওঁদের কি খাওয়াবো বল দিকি ? সাহেবটা যদি আসে, আমাদের খাওয়া খাবে তো ?