পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৩৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

७¢२ বিভূতি-রচনাবলী খোকা লাঠিট রাস্তার পাশে ফেলে রেখে আবার দিব্যি গুটু গুটু করে চলে। এক জায়গায় রাস্তার দু-পাশে ভাটুই গাছ বর্ষাকালে খুব বেড়েচে । রাস্তার দু-পাশে অনেক দূর পৰ্য্যন্ত ভাটুইবন। খোকা হঠাৎ দুহাত প্রসারিত করে বল্পে---কি ধান ! কি ধান ! —ধান কই রে ? ও হল— ---কি ধান ! কি ধান ! মতিলাল ভেবে দেখলে, অতটুকু ছেলে ধান এবং ভার্টুইয়ের পার্থক্য কি করে বুঝবে । —ও বাবা, কি ওত ? —কই রে ? —ওই—বসে আছে— মতিলাল খোকার আঙুলের দিগদর্শন অনুসরণ করে দেখলে, সামনের গাছের ডালে একটা কাঠবেড়ালি বসে আছে। খোকা আর যায় না, সে দাড়িয়ে গিয়েচে এবং ভয়ের দৃষ্টিতে চেয়ে আছে একদৃষ্টে সেটার দিকে । বাবার দিকে দুহাত বাড়িয়ে বল্লে—বাবা, কোলে— —কোলে আসবি ? —ভয় কব বে— - –কিসের ভয় রে ? এটা হল কাঠবেড়ালি—ও কিছু বলে না । ভয় নেই—চল— মতিলাল যে বন্ধুটির বাড়ী গেল, তারা ওকে এক পেয়ালা চ খেতে দিলে। মতিলালের ছেলেকে দিল একটুকরো মিছরি । খোকা মিছরি একটু মুখে দিয়েই মুখ থেকে বার করে নিয়ে মতিলালের মুখের কাছে নিয়ে গিয়ে বল্লে—বাব, খা-- এখন এ ব্যাপারটার ভেতরের কথা এখানে বলা এ সময়েই দরকার । ছেলের বয়স যখন আরো কম, দশ-এগারো মাস কি বছরখানেক, তখন থেকেই সে নিজের মুখে কোনো জিনিস মিষ্টি লাগলেই বাবার মুখের দিকে হাত বাড়িয়ে বলবে–বাবা, খা— মতিলালেরও বিশেষ আপত্তি থাকত না তাতে । অবশ্য একটিবার বাদে । একবার মাতৃস্তন্য পান করতে করতে খোক নিকটে উপবিষ্ট মতিলালকে বলেছিল—বাবা, মিস্ত খা— - মতিলালের স্বামী-স্ত্রী মিলে খুব হেসেছিল । নিজের মুখে যা ভাল লাগবে, তাই সে দেবেই বাবার মুখে এবং মতিলাল তা খেয়েও এলেচে, মুশকিলে পড়ে যেতে হয় ওকে, লোকজন থাকলে । এখানে যেমন হল । মতিলাল সলজ্জভাবে বল্লে—না, না—আমি আবার কি, খাও না— খোকা বাবার রাগের কারণ খুজে পেলে না, রোজ যে খায়, আজ খাচ্ছে না কেন ? নিশ্চয়ই রাগ করেচে।