পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৩৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

eest বিভূতি-রচনাবলী বাঘের দল বায়ু সেবন করবে। অরণ্য তার পূর্ব-অধিকার আবার পত্তন করবে। ওর ছেলেরা বিলাসী-যুবক, এই জঙ্গলের মধ্যে এসে বাস করবার জন্যে তাদের রাত্রে ঘুম হচ্চে না ! কেউ এসে এখানে বাইরে থেকেও বাস করবে না । কারণ, যারা আসবে, তাদের উপজীবিকা হবে কি এ নির্জন অরণ্যে ? ভরহেচ, নগর তো তাদের খেতে দেবে না। রামলালের মত ব্যাঙ্কে টাকাও থাকবে না তাদের । এই প্রস্তর-সফুল মালভূমিতে চাষবাস করবে কিসের ? আর যারা সত্যিই রামলালের মত ধনী, তারা শহরের শত মুখবিলাসের মোহ কাটিয়ে এই পাণ্ডববর্জিত স্থানে আসতে যাবে কেন ? ওর ছেলেরাই তো আসে না । রামলাল মাঝে-মাঝে আমায় বলে—তোমার কি মনে হচ্চে ? লোক কতদিনের মধ্যে এখানে হবে । —শীগগির হবে । —এক-একজন গৃহস্থকে কতটা জমি দেওয়া দরকার ? —কতটা মোট জমি আপনার ? —দেড়শো বিঘা। দরকার হোনসে আউর বন্দ বস্ত করেঙ্গে । —ধরুন, পাচ বিঘে । —তিন বিঘা হাম ঠিক কিয়া । —জলের কি ব্যবস্থা হবে ? —ইন্দারামে ইলেকট্রিক ও পাম্প বলা দেগা, তামাম জায়গামে পানি সাপ্লাই হোগা—কুছ-fভ নেহি—ওসব ঠিক হো যায়গা। —ঠিক আছে । —তোমার সব দেখাশুনো করতে হবে । —নিশ্চয় করবো । আনন্দের সঙ্গে করবো । এ ধরণের কথা প্রায়ই হত । মুখে যাই বলি, বুড়ে রামলালের জন্যে আমার দুঃখ হয়। মনে যা আসে কখনো মুখ ফুটে প্রকাশ করতে পারিনি । অনস্বয়া বাঈ একদিন খাবার সময় বলে পাঠালে—থোকা-ফলের তরকারি খাবে ? —সে আবার কি ? —বিকানীরে হয় । শুকনো ফল দেশে থেকে এসেচে, ভিজিয়ে রেখে তরকারি হবে । খেয়ে দেখে, খুব ভালো । —মৗসীমা যখন বলচেন, নিশ্চয়ই খাবো । ওদের তরকারি কোনোটই আমার ভালো লাগে না। অন্ত-ধরণের রান্ন, বাংলাদেশের মত খেতে নয় কোনোটাই। তবে, ঘি আর দুধের প্রাচুর্ঘ্যে সব মানিয়ে যেতো। দিনকতক পরে ভাবলাম, এখানে বলে বসে থাচ্চি কেন, এদের কি উপকার আমি করচি এর বদলে ?