পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৩৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ԾԱՆ বিভূতি-রচনাবলী কিন্তু সেই বসন্তে যেমন প্রাণ -চঞ্চল হল, মনও উতলা হল আমার । চ'লে যেতে হবে এখান থেকে আমাকে । আমি বুড়ো রামলাল নই, অনস্বয়া বাঈয়ের মত বড়লোকের বেী নই—আমার ভবিষ্যৎ আছে, এখানে যতই ভালো লাগুক, আমার ভবিষ্যৎ নষ্ট হবে এখানে থাকলে । অনস্বয়া বাঈ আমাকে ব’লে পাঠালে, তার সঙ্গে মোটরে রাচিতে যেতে হবে । এর আগেও দু’একবার হাজারিবাগে গিয়েচি ! যেবার সঙ্গে টাকাকড়ি বেশি থাকে, সেবার আমাকে নেয়। একবার ঠিক করলাম, রাচি গিয়ে পালাবো । তারপর কি কাণ্ডটাই হল । রাচি বড়-পোস্ট অফিসের সামনে আমি গা-ঢাকা দিলাম ! অনস্বয়া বাঈ তার দেওরের গদিতে গিয়েচে কি কাজে—মোটর ওখানেই ছিল। ফিরে এসে দেখলে, আমাকে ওর চাকর ও ড্রাইভার খোজাখুজি করচে। ও ধরে নিলে, আমি গেয়োলোক শহরে এসে হারিয়ে গিয়েচি । গদিতে গিয়ে জানিয়ে তোলপাড় করলে—টাকাপয়সা পুলিস ও লোকজনের সাহায্যে রাচি শহর । মা যেমন হারানো সস্তানকে খোজে, তেমনি ক’রে অনস্বয়া বাঈ খুজলে তাদের অর্থবল ও লোকবল দিয়ে আমাকে । খুজে বারও করলে রাচি-চক্ৰধরপুর সার্ভিসের বাস থেকে। এর কৈফিয়ৎ দিতে হল নানা রকমে বানিয়ে । ঘটনার দুতিন সপ্তাহ পর পর্য্যন্ত এ নিয়ে অনসূয়ার কত কথা আমার সঙ্গে । অনসূয়া বলতে—রাস্তা চিনতে পারলে না ? --नों | —তখন কি করলে ? আমাদের গদির ঠিকানা মনে এলে না ? —না: | --আহ, তখন তোমার মনে কি হল ! আমি জানতাম না তুমি ওরকম। আর কখনো তোমাকে রাচি নিয়ে আসবো না । —তাইতে । —মোটরবাসে উঠেছিলে কেন ? —ভাবলাম, ভরহেচ, নগরে যাই । ভুল হয়ে গেল সেখানেও । অনস্বয়া বাঈ ও ওরা এই ঘটনার পরে যেন আমাকে বেশি ক’রে জড়িয়ে ধরলে। আমিও ওদের আঁকড়ে ধরলাম । এত যখন ওদের স্নেহ, তখন আর কোথাও ওদের ছেড়ে যাবে না। যা ঘটে ঘটুক ভবিষ্যতে, রইলাম এখানেই । বৈশাখ মাসের শেষ —ভীষণ গরমের পর এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গিয়ে কুরচিফুলের স্ববাস ভেসে আসচে বন থেকে । রামলাল আমায় ডাকিয়ে বল্লে—পেট-মে থোড়া দরদ উঠা হ্যায়, দেখো তে ই-ধার আ-কর— রামলালের মুখ-চোখের অবস্থা যেন কেমন-কেমন । রাত্রে কিছু খেতে বারণ করলাম। বুড়ে বয়সের অমুখ-ক্রমেই পেটের ব্যথার বৃদ্ধি•••তার সঙ্গে জর ।