পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৩৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Öጫ• বিভূতি-রচনাবলী এ কি মাছের বিপৰ্য্যয় ভিড় ! এত লম্ব, এত ঘন মাছের ঝাক যে পৃথিবীতে থাকে, মেছোবাজারের বাইরে যে এত মাছ জীবস্ত অবস্থায় চলে বেড়ায়—এসব কথা কে জানতো ? মাছ! মাছ! যেদিকে চাওয়া যায়, শুধু কৈ মাছ। কার মুখ দেখে আজ ওরা সকালে বিছানা ছেড়ে উঠেছিল ! দুলাল বল্পে—এত মাছ ধরবার কি করা যাবে তাই ভাবো— —আমার জামাটা খুলে ফেলি । তাই দিয়ে ছেকে মাছ ধরো— যে কথা সেই কাজ । কিন্তু কিছুক্ষণ পরে দুই অনভিজ্ঞ শহুরে বালক বুঝতে পারলে এ রকম উপায়ে মাছ ধরা চলবে না। এত মাছ রাখবার স্থান নেই, ছোট জামায় ছেকে এ বিরাট মৎস্যবাহিনীর কতটুকু ভগ্নাংশ কাপড়ে বাধবে ? দুলালই প্রথমে সে কথা বুঝল । বুঝে বল্লে—আয় গায়ের মধ্যে খবর দিই মাছের বাকের । গায়ের কত গরীব লোক মাছ খেতে পাবে এখন । আমরা যা মাছ ধরেচি ওই তো নিয়ে যেতে পারব না । বরং এগুলো পৌছে দিয়ে বাড়ী থেকে আলাদা পাত্র নিয়ে আসি— - দু'জনে কুড়ি দুই মাছ কাপড়ে বেঁধে নিয়ে ছুটলো বাড়ীর দিকে । বিমল বল্লে—গরীব দুঃখীদের বাড়া বাড়ী খবর দাও দুলালদী—চার টাকা মাছের সের— প্রাণ পুরে মাছ খাকৃ—ওদের কিনে খাবার সাধ্য নেই । ওরাও বড় ভাড় নিয়ে বাড়ীর মজুর কষাণের সঙ্গে এসে পড়লে মাঠে । এতক্ষণে লোকে লোকরণ্য হয়ে গিয়েচে সারা মাঠট । শুধু হাত দিয়ে চেপে ধরে কৈ মাছ ধরচে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা। যত বা ধরে, তত বা আবার ওঠে । অফুরন্ত কৈ মাছ উঠচে বিলের জল থেকে । বুড়ো হৃষিকেশ বুনো বললে—ষাট বছর বয়েস হল, এমন তাজব কাণ্ড কখনো দেকিনি বাবু— উজোন জলে কৈ মাছ হঁটে শুনতাম——আজি চক্ষি দ্যাখলাম— গায়ের লোক-—মুচি, ডোম, বাঙ্গী, জেলে, ব্রাহ্মণ, কুমোর কেউ বাকি ছিল না। কেউ এক কলসী, কেউ এক ঝুড়ি, কেউ দু’কলসী, কেউ এক থলে, কেউ এক ছোট ভাড়—যে যা এনেচে তা ভৰ্ত্তি করে মাছ নিয়ে গেল বাড়ীতে । 峻 কেউ রেখে আবার নতুন ভাড় বা কলসী হাতে ছুটে ফিরে এল । দামোদর সা বল্লে—ধরচো মাছ, ভাই সব, আড়াই টাকা তেলের সের সে কথা মনে রেখে। না খাও তো নষ্ট করে না—মছ ছেড়ে দিয়ে যাও জলে— কে একজন বল্লে—না খাই তো বিলিয়ে দেবে-বন্ধু-কুটুম্ব আছে—এ কি ছেড়ে দিয়ে যেতে আছে ভায়া ? বুদ্ধিমান মধু ঘোষ বল্লে—কৈ মাছ জ্যান্ত কতদিন থাকে জল দিয়ে জীইয়ে রাখলে জানো ? দু'মাস। যত ইচ্ছে ধরে, তবে বাড়ী নিয়ে গিয়ে যত্ন করে রেখে, মরে না যায় ।