পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৩৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ԾՊՆ বিভূতি-রচনাবলী সমস্বরে ঐকতান, কোথাও ঝর পাতার ওপর অজান কোন নিশাচর জন্তুর দ্রুত পদচারণের খস খস্ ধ্বনি, কোথাও ডালাপাল কঁাপিয়ে বাতাস ওঠার শব্দ-সমস্ত বনভূমিতে ততক্ষণ জোৎস্না নেমেচে, কেবল নিবিড় ঝোপঝাপ কিংবা পাহাড়ের খাজগুলো বড় অন্ধকার দেখাচ্ছে তখনো | ললিত বল্লে—এ লেকের দেখচি সীমা নেই—কতদূর বাইবো ? —চলো, আজ সারারাত বাইবো বোট । –এবীর বাংলোতে গিয়ে খাওয়া-দাওয়া করা যাক । —একরাত্রি না-ই বা খেলুম, চলো দেখা যাক । এক জায়গায় ডাঙায় মস্ত বড় একটা হর্ভুকী গাছ, তার ডালে ডালে আলোকলতা ছলে দুলে ঝুলে পড়েচে জলের উপর । বড় বড় পাথরের চাই সেখানটাতে জল পর্যাপ্ত নেমে এসেচে-- সমস্তটাতে জ্যোংস্ক পড়ে কি অপূৰ্ব্ব দেখাচ্চে । আমরা আবার সেখানে বোট বেঁধে পাষাণের উপর জ্যোৎস্নায় বসলাম । কাছেই কত কি বন্য লতাপাতার ঝোপ, কটুতিক্ত গন্ধ উঠচে বাতাসে । বাত দশটা বেজেচে । দিনের গরম অনেকক্ষণ কেটে গিয়ে রাত্রির শীতল বাতাস আমাদের স্মরণ করিয়ে দিচ্চে আমাদের সঙ্গে গায়ে দেবার কোনো মোট জামা বা কাপড নেই । ললিত বল্লে—এ দেখচি, কম্বল আনা উচিত ছিল— --বেশ ঠাণ্ড । সত্যি ভাই— —চলো ফিৰ্বি । হঠাং দুজনেই অবাক হয়ে জোংমালোকিত জলরাশির দিকে চেয়ে দেখলাম একদল বুনো ঠাস পাহাড় থেকে নেমেচে জলে, দিব্যি সীতার দিচ্চে —দর থেকে দেখাচ্চে যেন একদল শুখী নারী জলকেলি শুরু করেচে। গা ছম ছম করে উঠলো দুজনেরই। বাংলো থেকে অনেকদূর এসে পড়েচি, রাত্রিও গভার, পেট চুই চুই করচে থিদেয়, ঠাণ্ড বাতাসে শীত ধরে গিয়েচে দুজনেরই ৷ - বোট বেয়ে ফিরতে লাগলাম কুলের দিকে । চাদ খুরে গিয়েচে । যেন মনে হল পথ হারিয়েচি, দিক নির্ণয় করতে পারচিনে—সমস্ত অঞ্চলটা যেন মায়াময় হয়ে গিয়েচে–যেন পৃথিবী থেকে বহুদূরে মহাবোমের অন্য কোন অজানা গ্রহে নির্জন বন-বেষ্টিত হ্রদের আমরা দুটি নিঃসঙ্গ প্রাণী, কোনো অজানা উপগ্রহের জ্যোৎস্নায় বিভ্রান্ত হয়ে পথ হারিয়ে ঘুরচি, আমাদের সে পরিচিত পৃথিবীর আত্মীয়-স্বজন থেকে চিরবিচ্যুত অবস্থায় । কতকাল যেন ছেড়ে এসেচি সে-সব পরিচিত পথরেখা, তারায় তারায় পরিব্যাপ্ত আকাশ আর জ্যোৎস্না-ভরা জলরাশির দিকে চেয়ে সে অনুভূতি আরও দৃঢ় হল মনে । মানিক দূর এসে বা দিকের পাহাড়ে স্পষ্ট একটা শব্দ শোনা গেল, যেন করাত দিয়ে তক্ত চিরচে ।