পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৩৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কুশল পাহাড়ী ይፃሕ দেবো। তুমি ছাড়া আর কার কাছে যাবে বলে ? এমন গঙ্গাজলে ধোয়া মন আর কার আছে ? রাম চাটুয্যের স্ত্রী টাকা দিয়েছিলেন, কিন্তু সে ভগ্নীপতির দেখা আর কোনদিন পান নি তারপরে । অবিশ্বি টাকাও পান নি । সেদিন রাম চাটুয্যের নাবালক পুত্র হারাধন এসে মাকে বল্লে—ম, হাটে বেগুন সস্তী হয়েছে, কাল শুনেছি। আজ থেকে আর বেগুনের বাজরা বাসে যাবে না । —কেন ? ---হরিপদ প্রত্যেক বাজরা পিছু চার আন ক’রে জলপানি নেয়, ওরা আমাদের বসে ন৷ গিয়ে লাহিড়ী কোম্পানীর বাসে যাচ্ছে । –তুই হরিপদকে বল্পি কিছু ? -আমার কথা শোনে না। তুমি ডেকে বরং বলে । এই হরিপদই এক হাজার টাকা চেয়ে রেখেছে বাসের এঞ্জিন সারাবার দোহাই দিয়ে । রাম চাটুয্যের স্ত্রী অনেক ভেবে দেখলেন । বাপের ব্যবসা যদি চালাতে হয়, তবে এ সব লোক দিয়ে হবে না । হরিপদ সঙ্গন্ধে অনেক কথা তার কানে গিয়েছে। পুলিশকে দিতে হবে বলে দু-দু’বার সে মোট টাকা নিয়েছে, কিন্তু পুলিশকে দেয় নি। যদিও দিয়ে থাকে খুব কম, নিজে মেরে দিয়েছে টাকাটা । বিশেষ ক’রে আজকাল যেন হরিপদ কি রকম হয়েছে। কেবলই পাচ টাকা লাগবে, কাল আশি টাকা লাগবে, বাসের ভাড়ার টাকা ঠিকমতো আদায় দেয় না-হিসাব চাইলেই চটে যায়। অর্থাৎ ব্যাপার এই, ও বুঝেছে ওকে ছাড়া আর চলবে না, বাসের কাজ আর কেউ জানে না, রাম চাটুয্যের স্ত্রীকে যদি বাসের ব্যবসা বজায় রাখতে হয়, তবে হরিপদ ভিন্ন কাজ চলবে না। কাজেই হরিপদর মেজাজ চড়বারই কথা । হরিপদকে ডেকে বেগুনের বাজরার জলপানির কথা বলতেই সে চটে গেল । দু'এক কথার শেষে সে বল্লে—অনেক কিছু ঝুকি ঘাড়ে ক'রে নিয়ে লাইন বজায় রেখেছিলাম, কিন্তু আপনাদের অলক্ষ্মীতে ধরেছে বুঝতে পেরেছি। এ লাইন যাতে পাল কোম্পানী কিংবা লাহিড়ী কোম্পানী পায়, সে চেষ্টা আমি করবো । দেখি আপনাদের কতো ইয়ে হয়েছে । হরিপদ চটে বেরিয়ে গেল।” সেই থেকে বাস বন্ধ। সেই থেকে নগদ টাকা আসা বন্ধ হয়ে গিয়েছে, সেই থেকে সংসারের অবনতির স্বত্রপাত। কলসীর জল গড়াতে গড়াতে আর কতদিন থাকে ? দুপুরবেলা বারাসত থেকে প্রতুল এলো। রাম চাটুয্যের স্ত্রীকে প্রণাম ক'রে বল্লে—খুড়ীম, ভালো আছেন ? হারাধন ভালো আছে ? রাম চাটুয্যের স্ত্রী বল্পেন—এসো, এসো বাবা । ভালো আছো ? বেঁচে থাকো বাবা । --বাসের কাজ কেমন চলছে ? - —সে সব অনেক কথা । বাস বন্ধ হয়ে গিয়েছে । হরিপদ রাগ ক'রে চলে গিয়েছে।