পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৪১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কুশল পাহাড়ী Woo —কি —তুমি বাপজীকে বলে, তোমার কাছে আমি আংরেজি পড়বে। —আজই বলবো । তারপর রাখনি আমার সঙ্গে বসে গল্প করে। বাঙালী বাবু, এখানে থাকে, কোথাও যেতে দেবো না । মাঠা খাওয়াবো, ছাতুর লাড খাওয়াবে, মালাইমিঠা খাওয়াবো । —তা না হয় খেলাম, কিন্তু মাছ ? মাছ না খেলে বাঙালীর শরীর টিকবে কত দিন ? রাখনি খিল খিল করে হেসে ওঠে। ঝক ঝক্‌ করে ওর মুক্তোর মত দাতগুলি—চোঁদ পনেরো বছরের স্বত্র মেয়ের মুখের প্রাণখোলা হাসি। বলে, মছলি কত আছে কুসমাইয়ে, পাটনডণ্ডীর নহরে মাছ ধরতে যাবে ? —সে গবর্ণমেণ্টের খাল । সেখানে ওদের লোক বসে আছে। মাছ ধরতে দেবে কেন ? —আমি ধরবে । তোমাকে ধরে দেবো । মেয়েমানুষকে নহরের চৌকিদার কিছু বলবে না । এবার আমি হেসে ফেলি। বল্লাম, গবর্ণমেণ্টের চৌকিদার মেয়ে পুরুষ বাছবে না রাখনি। চুরি যে করে তার আবার মেয়ে-পুরুষ । দুজনেই খুব হাসি। আমোদ লেগেচে দুজনেরই। রাখনি এত ভালো মেয়ে, তার আপন-পর জ্ঞান ছিল না। আমি ওদের বাড়ীতে কেউ না, অন্নদাস বলা যেতে পারে, রাখনি কিন্তু আমাকে বড় আপনার জন ভাবতো । তার সৰ্ব্বদা চেষ্ট ছিল যাতে আমি অভূক্ত না থাকি, খেয়ে আমার পেট ভরে। এজন্যে তার কত যত্ন, কত অসম্ভব হাস্যকর প্রয়াস । আমি বলতাম, রাখনি, আমি বিদেশী লোক । আজ এয়েচি কাল চলে যাবো । তুমি আমাকে অত ভালোবাসো কেন ? আমি চলে গেলে কষ্ট পাবে। রাখনি বলতে, ইস্ ! চলে যাবে বইকি ! —তবে কি ? —বিয়ে করবো তোমাকে । দুজনে বাস করবো আমাদের বাড়ীর পাশে। —চলবে কিসে ? —বাবার কাছ থেকে জমি চেয়ে নেবো । তুমি জমি চাষ করবে। ওইটুকু মেয়ের কি বুদ্ধি। আমার এমনি হাসি পেতো। এর মধ্যে সব ঠিকঠাক করে বসেচে। রাখনিকে আমারও বডড ভাল লাগতো। ওর স্নেহ-যত্ন ভোলবার নয়। অবিপ্তি ওর বাবাও খুব ভালো, একদিনের জন্যেও আমার প্রতি তার অযত্ন দেখি নি। আমি ওখানে মাস ছয়েক থাকবার পরেই এক ঘটনা ঘটলো । একদিন সন্ধ্যার সময় বেড়িয়ে এসে দেখি বাড়ীর সকলের ব্যস্ত চঞ্চল ভাব, মুখ গম্ভীর। শোনা গেল মাধোলালের স্ত্রীর প্লেগ হয়েচে । প্লেগকে ওখানকার লোক বডড ভয় করে । বাড়ীতে লোকজন আসা বন্ধ হয়ে গেল। গ্রামের চৌকিদার এগারো মাইল দূরবর্তী থানায়