পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৪১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

कूनंण পাহাড়ী כ9י" বনকাটি গ্রামের পরে মাঙ্গনবেড়া, মাঙ্গনবেড়ার পরে ব্যাপড়িশোল । এত কথা বলবার উদ্দেশ্য এই যে, বাপড়িশোল গ্রাম যে রিজার্ভ ফরেস্টের ছায়াময় নিবিড়তার কোথায় কতদূরে লুকোনো, সেটা বোঝা যাবে। এই গ্রামের মাঝখানে দাড়িয়ে চারিদিকে চাইলে দেখা যাবে, চক্রাকারে নীল শৈলমাল, মহাডাল, কাট্‌চুরি, নানকাসবাহাল, সয়ছুরি ও চুকুরদি পাহাড় (যেটার উচ্চতা আগেই বলা হয়েচে ) এ ক্ষুদ্র গ্রামকে ঘিরে রেখেচে । জারুল ফুল ফোটে বর্ষাকালে, করমগাছের হলদে ফুল ঝরে পড়ে থাকে বনতল বিছিয়ে, ধনেশ পাখী ডাকে, কেকারব করে বনশীর্ষে ময়ুরের দল । মাগনিরাম ষোল বছরের ছেলে । ম্যালেরিয়ায় ভুগে রোগ শরীর। এই সব জংলী গ্রামে বর্ষাকালে ম্যালেরিয়া একবার যাকে ধরে, তাকে একেবারে কোথায় যে নিয়ে গিয়ে ফেলে ! এ গ্রামের অধিকাংশ লোকের কিন্তু স্বন্দর স্বগঠিত দেহ, পাথরে খোদাই করা মূৰ্ত্তির মত। মেয়ের পুরুষদের চেয়েও স্বঠাম, সাবলীল—অধিকাংশ মেয়ের মুখই যেমন সরল, তেমনি সুন্দর। মাগনিরাম আজকাল অন্যমনস্ক হয়ে থাকে সৰ্ব্বদা । নিজের অমুখের জন্যেই বোধ হয়। বন্ধু ননকুয়া এসে বল্লে—চল মাছটা ধরে আনি— মাগনিরাম রাগের সঙ্গে বল্লে—নাই যাবো— —কেনে ? —উদাস লাগচে মাথাটা । —দুখাচ্চে ? —না হে, উদাস লাগচে । উ কথায় তোর কি কাম ? নাই যাবে, ভাগি যা ! —কেনে ভাগবে ? ইঃ ! —fদখাবো তোকে ? দিখবি ? —র্কড়ি ধরবার হাত্তি নি, দিখাবি কুথ থিকে ? উ আত সোজা ? —ভাগি যা ! –নাই যাবো । 彦 মাগনিরাম রাগের সঙ্গে একটা ঢ়িল ছুড়ে মারলে । নন্‌কুয়া হাসতে হাসতে পালিয়ে গেল । পালিয়ে ঠিক নয়, চলে গেল বলাই সঙ্গত। ম্যালেরিয়া-জীর্ণ মাগনিরামকে কে বা ভয় করবে ওদের মধ্যে ! _ মাগনিরাম সেই দুঃখেই উদাস মনে থাকে আজকাল । বরজোর নালা ঘুরে ঝাপড়িশোলের নিকট দিয়েই গিয়েচে, সিকি মাইল দূরে একটা বন পার হলেই। এই নালার ধারে বনের ওপারে গ্রামের লোকেরা বর্ষাকালে কান্দা আলু তুলতে যায়। কাদা আলুর বড় লতা শাল আসান-অৰ্জুন গাছের গা বেয়ে অনেক উপরে উঠে যায়, সেই অত উচুতে যেখানে বনের ময়ূর নৃত্য করে বর্ষার মেঘ পাহাড়ের শিখরে জমলে—সেখানে ফুটে থাকে কান্দা-আলুলতার নীল ফুল । মাগনিরাম সে ফুল দেখে মুগ্ধ হয়ে যায়, কিন্তু অত উচুতে উঠে ফুল সংগ্রহ করতে পারে না