পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৪১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাবলী "שכ9) বলে গ্রামের মেয়েরা তাকে ক্ষেপায়, দোষ ধরে, মাতুষ বলে ভাবে না । তারা বলে—কমজুরী লোকটা হে, উ উসব কামের লয়— ও উত্তর দেয়—গায়ের জুর লা আছে তো কি করচে। তুদের মনটা নেই যে হে— বুধনি হেসে বলে—মনে কি করবে ? —উ তোদের বুঝাতে লারবো । জাহিল লোকদের বুঝবো কি হে? —উঃ, ভারি জাহিল জাহিল করতে এসেছে, বড় পণ্ডিতটা আছে তাই શિલ્ડ এসেছে— ভাগি যাঃ ! –তু ভাগি যা। ওরা রাগ করে বলে—তুর ঘরে চাউল সিঝাই না মকাই মাগনি করি যে ভাগি যাবে ? এবার মাগনিরাম হাসে । মেয়েদের রাগ দেখে ওর হাসি পায় । বলে—যা যা হুজুমে চালাকানা—ঠ্যাঙাকানা দো— এ কথার মানে, না গেলে লাঠি মারবো । মেয়ের রেগে গালাগালি করে আরো । ও হাততালি দিয়ে হাসে । বলে—বিজলি চমকাও কানা দো— * অর্থাৎ আকাশে বিদ্যুৎ চমকাচ্চে। ও চমৎকার গান বঁধে সেদিনটা বিদ্যুৎ চমকানো নিয়ে । নিজেই গায় । এবার মেয়েরা মন দিয়ে শোনে । ওর ওপর তাদের রাগ ও বিতৃষ্ণ অনেকখানি চলে যায় । বোঙ্গা পরবের সময় ও নিজের বাধা ছড়া ও গান নিজের বন্ধু নন্‌কুয়া ও ছোট বোন রতুকে শেখায় । আসলে মাগনিরাম হল কবি । কবির বংশও বটে, ওর বাবা জাতে সাওতাল, কিন্তু রাচি শহরে কিছুদিন ছিল। সেই জন্তেই ওর ছেলের নাম মাগনিরাম নতুবা সাওতালের ছেলের নাম মাগনিরাম হত না । রামভক্তি সে বিদেশ থেকে এই নিবিড় বনপ্রদেশে আমদানি করেছিল। ওর বাবা এদেশে একজন বিখ্যাত লোক। রাচি শহরে সে মোটর গাড়ী দেখেচে, টেলিফুক দেখেচে, বিজলি বাতি, বিজলি পাখা, কলের গান—কত কি দেখেচে । আজ বছর সতেরো আগেকার কথা । সতেরো বছর ধরে সেই গল্প ভাঙিয়ে খাচ্চে বাড়ী বসে। • গ্রামের লোকদের সে অবজ্ঞার চোখে দ্যাখে, বলে—সে দুনিয়াটার কি দেখলি রে ? কুথ না গেলি, শরীরটার সঙ্কত হবে কুথা থেকে হে ? মনের সঙ্কত হবে তবে তো শরীরটাতে লাগবে। ওর কাছে সবাই আশ্চৰ্য্য গল্প শুনতে আসে । কত রকম পরামর্শ করতে আসে। ছেলেটিও বাপের ধারা পেয়ে বসে আছে। দুনিয়া সংসারের কোনো কাজে লাগে না । বসে বলে কবিতা বানায় আর গনি বাধে । এদিক থেকে সে বাপের চেয়ে এক কাটি সরেস হয়েচে, বলাবলি করে গ্রামের লোকেরা। অবিপ্তি নিন্দ হিসাবেই বলে, প্রশংসা করে নয় । মাগনিরামের মন ওড়ে কান্দালতার নীল ফুল যেখানে ফুটেচে, সেই বনের মাথার ওপরে। বাবাকে সে বড় মানে ; বাবা একজন কত বড় লোক। কত দেশ ঘুরেচে। এখানকার জাহিল লোকেরা কি করে বুঝবে তার বাবা কত বড় ?