পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२२ ৰিভূতি-রচনাবলী —বাবু, বাড়িতে কেউ নেই। মোর ছোট ছেলেভা হাতে ধরে নিয়ে এল, তবে এ্যালাম। একটু দয়া করুন— আবার আধ ঘণ্টা দেরি হয়ে গেল, যা ভেবেছিলুম সেই সন্ধ্যেই নামলো। এ সময়ে অন্তত জস্তিপুরের ঘাট পেরুনো উচিত ছিল। নৌকোয় উঠে যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বচিলাম। রুগীদের বিরক্তিকর এক ধেয়ে বোকা বোকা কথা, স্টোভের ধোয়ার সঙ্গে মেশানো আইডোফরমের গন্ধ, ফিলটার থেকে জল পড়বার শব্দ, সামান্য কুইনিন ইনজেকস্যন করবার সময় চাষীদের ছেলেমেয়েদের বিকট চিৎকার যেন তাদের খুন করা হচ্ছে গল। টিপে—এ সব মানুষের কতক্ষণ ভাল লাগে ? মাঝিকে বললাম—বাপু অভিলাষ, একটু বেশ নদীর মাঝখান দিয়ে চল, হাওয়া গায়ে লাগুক । –বাৰু, কুঁদিপুরের বাওড়ের মুখে গলদাচিংড়ি মাছ নেবেন বললেন যে ? —সে তো অনেক দূর এখনো। একটু তো চলো । সারাদিনের পর যখন কাজটি শেষ করি তখন সত্যিই বড় আরাম পাই। মঙ্গলগঞ্জ থেকে ফেরবার পথে এ নৌকাভ্রমণ আমি বড় উপভোগ করি । সনাতনদা সঙ্গে থাকলে আরও ভালো লাগে। একা থাকলে বসে বসে দেখি, উচু পাড়ের গায়ে গাঙ শালিকের গর্ত, খড়ের বনের পাশে রাঙা টুকটুকে মাকাল ফল লতা থেকে দুলছে, লোকে পটলের ক্ষেত নিডুচ্চে । ভেবে দেখি, ভগবান আমায় কোন কিছুর অভাব দেন নি । বাবা যা জায়গা জমি রেখে গিয়েছেন, আর আমি যা করেছি তার আয় ভালই, অস্তত যাট-সত্তর ঘর প্রজা আছে আশে-পাশের গায়ে । আম কাঠালের বড় বড় ছুটে বাগান, তিনটে ছোট বড় পুকুর, পয়ত্ৰিশ ৰিৰে ধানের জমিতে যা ধান হয় তাতে বছরের চাল কিনতে হয় না। স্বরবাগার মত স্ত্রী। পাড়াগায়ে অত বড় বাড়ী হঠাৎ দেখা যায় না—অন্তত আমাদের এ অঞ্চলের পাড়াগায়ে বেশি নেই। নিজে ভাল ডাক্তার, মেডিকেল কলেজের ভাল ছেলেই ছিলাম। কেইনগরে কিংবা রানাঘাটে ডাক্তারখানা খুলতাম কিন্তু বাবা নিষেধ করেছিলেন। তখন তিনি বেঁচে, আমি সবে পাশ করেছি মাস ছুই হোল। খুলনা জেলার জয়দিয়া গ্রামে আমার এক মাসিমা ছিলেন, তিনি আমাকে ছেলের মত স্নেহ করতেন, পরীক্ষা দিয়ে তাদের ওখানে মাস-দুই গিয়ে ছিলাম। সেখানেই খবর গেল পাশের। বাড়ি ফিরতেই যাবা জিগোল করলেন—কোথায় বসবে, ভাবলে কিছু ? —তুমি কি বলে ? —আমি যা বলি পরে বলব, তোমার ইচ্ছেটা শুনি । —আমি তো ভাবছি রানাঘাট কিংবা কেট্রনগরে— —আমন কাজও করে না । —তবে কোথায় বলে ? —এই গ্রামে বসবে। সেই জন্তে তোমাকে চাকরি করতে দিলাম না, তুমি শহয়ে গিয়ে