পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৪২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কুশল পাহাড়ী 9ee —বেশ পুল করেচে। সাহেবের করে ভালো । —আপনি কোথায় যাবেন ? অনেকদিন আসেন নি বুঝি কলকাতায় ? —আমি ভগবান । কলকাতায় এসেচি এই ট্রেনে । হাওড়া স্টেশনে কেউ তো আমায় অভ্যর্থনা করবার জন্যে যায় নি ? - কি সৰ্ব্বনাশ, লোকটা বলে কি ! ভগবান ? এই লোকটা ? একে তো নিতান্ত অভাজন বলিয়া মনে হইতেছিল—যদিও কি গুণে লোকটা মনকে আকৃষ্ট করিয়াছে বটে। আমি পায়ের ধূলা লইয়া প্রণাম করিলাম। বলিলাম—আপনি ? —হঁ্যা । বলি, ওরা আমাকে কেউ স্টেশনে অভ্যর্থনা করতে এলো না কেন ? —ওরা জওহরলালজিকে এগিয়ে নিয়ে গেল কিনা—তাই— —আর আমার বেলা কেউ বুঝি এলো না ? ভদ্রলোক দেখিলাম ছেলেমানুষের মত ঠোঁট ফুলাইয়া অভিমানের স্বরে কথা কয়টি বলিলেন । আমার দুঃখও হইল, হাসিও পাইল । ভগবান এত ছেলেমানুষ ! সাস্তুনার স্বরে বলিলাম—তা কেন, গৌড়ীয় মঠের বাবাজিরা কীৰ্ত্তন পার্টি নিয়ে এসেছিলেন তো ? তা, বোধ হয় আপনাকে তারা চিনতে পারেন নি। আপনার কোনো ফটো তো ইতিপূৰ্ব্বে কোনো খবরের কাগজে বার হয় নি, চেনাই যে দায় । ভগবান আমার কথায় ছেলেমানুষের মতন অল্পে সাত্বনা পাইয়া বলিলেন—তা বটে। চিনতে পারে নি তা কি করবে। শোনে, আমার একটা ফটো তুলিয়ে খবরের কাগজে ছেপে দিতে পারবে ? —আজ্ঞে বলেন—আজ্ঞে আমি—ফটো আমি তুলিয়ে দিতে পারি। কিন্তু কোনো খবরের কাগজের লোকের সঙ্গে আমার আলাপ নেই। কাগজে ফটে ছাপাবার ব্যবস্থা তো করতে পারিনে— ভগবান নিরাশ ভাবে বলিলেন—ও ! আমার আবার মায়া হইল। তার এই অসহায় বালকের মত কণ্ঠের ও ! শুনিয়া বলিলাম —চলুন না কেন, এই কাছেই বৰ্মন স্ট্রটে ‘আনন্দবাজার পত্রিক আপিসে, ওরা আপনার ফটাে নিশ্চয়ই যত্ন করে ছাপবে আপনার নাম শুনলে—চলুন সঙ্গে করে নিয়ে যাচ্চি— ভগবানের মুখ আনন্দে উজ্জল দেখাইল । আগ্রহের স্বরে বলিলেন—চলে, চলে—তাই চলো--এইবার ফটো ছাপালে সামনের বারে অনেক লোক আসবে। তারপর যেন খানিকটা আপন মনেই বলিলেন•••লোক চেনে না তাই, ন চিনলে— আমি কিন্তু যে কথাটা ভাবিতেছিলাম, সেটা তাহাকে বলিলাম না। ফটো ছাপানে হয় না বলিয়া চিনিবার অসুবিধার জন্য যে র্তাহার অভ্যর্থনা হয় নাই তাহা তো কথা নয়, আসলে প্ল্যাটফর্মে তখন লোকজনই ছিল না তিনি যে সময় আসিলেন । হঠাৎ মনে পড়িয়া যাওয়াতে কথাটা বলিলাম যে তিনি কোথায় উঠিবেন ঠিক করিয়াছেন ?