পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৪৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কুশল পাহাড়ী 8)} তন্ন তন্ন করিয়া খুজিয়াও আর র্তাহাকে দেখিতে পাইলাম না। ভিড়ের মধ্যে হারাইয়া গেলেন, না অভিমান করিয়া আবার তাহার স্বধামেই ফিরিয়া গেলেন— কি করিয়া বলিব । গল্প নয় আমি এ গল্পটি শুনি যেভাবে তাও বলি । গাড়ীতে বড় ভীড়, ইন্টার ক্লাসও নেই, সেকেণ্ড ক্লাসও নেই। অতি কষ্টে একখানা গাড়ীতে ভীষণ ভিড়ের মধ্যে ঠেলেঠলে কোনরকমে উঠলাম। উঠে ঠিক বোঝা গেল না গাড়ীর মধ্যে কোথাও জায়গা আছে কি নাই। এক জায়গায় কায়ক্লেশে একটু স্থান করে নিয়ে কোনরকমে নিজেকে গুজলাম দুজন মানুষের মাঝখানে। আমার বঁ-ধারে যে লোকটা বসে ছিল, তাকে অন্ধকারের মধ্যে দেখে মনে হল গরীব উড়িয়া, কারণ আসছিলাম কটক থেকে। একটু অবজ্ঞার স্বরে বললাম—কোথায় যাউছন্তি ? আমার উড়িয়া ভাষার জ্ঞান বার-দুই পুরী আসবার অভিজ্ঞতার ওপর প্রতিষ্ঠিত, এটা এখানে বলা আবণ্ঠক । যে লোকটির গায়ে হাত দিয়ে কথা বল্লাম, সে বিরক্তির স্বরে পরিষ্কার বাংলায় বল্পে—এ রকম বলাটা এটিকেট নয় মশায়— আমি অপ্রতিভ হয়ে পড়লাম। বাঙালী ভদ্রলোক জানলে কখনই আমি এ রকম বলতে সাহস করতাম না । হাতজোড় করে বললাম—মাপ করবেন মশাই। আমি বুঝতে পারিনি— —না না কিছু না। আপনিও কিছু মনে করবেন না । ক্রমে খুব আলাপ জমে গেল ওঁর সঙ্গে । নাম বল্লেন জগবন্ধু চক্রবর্তী, বাড়ী বদ্ধমান জেলায়। বয়স সত্তরের কাছাকাছি, কিন্তু এখনো বেশ শক্ত-সমর্থ। সাধু সন্ন্যাসী ধরনের লোক। তীর্থে তীর্থে বেড়িয়ে বেড়ানোই কাজ। আগে রেলে কাজ করতেন। গত পনেরো বিশ বছর ধরে তীর্থ ভ্রমণ ছাড়া কোনো বৈষয়িক কৰ্ম্মে মন দেন নি। রাত তখন নট । এই সময় থেকে রাত তিনটেয় সময় খড়গপুর আসা পর্য্যস্ত দীর্ঘ পথে আমরা দুজনে শুধু গল্পগুজব করেচি। আমি বেশি গল্প করি নি, বেশির ভাগ গল্প করেচেন তিনি । একটা অসাধারণ ধরণের গল্প এখানে করি । শুনে সত্যিই অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। র্তার কথাতেই বলি — –সংসারটা অসার । চাকরি ছেড়ে দিয়ে তীর্থে তীর্থে বেড়াতে লাগলাম। বুঝলেন না ? কিছু ভাল লাগে না। —আপনার স্ত্রী ? —স্ত্রী থাকে বাড়ীতে ।