পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৪৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

858 বিভূতি-রচনাবলী —তুই যাবি, তবে তোর মা যে কাদবে ? —-কাল আসব ন’টার গাড়ীতে । খোকার কাছে যত গাড়ীই যায়, সব ন’টার গাড়ী । আর ভবিষ্যৎ কাল মাত্রেই ‘কাল’ । —বাবা, তুই ন’টার গাড়ীতে যাবি ? —ই্যা । —আমি যাবে কাল । —মার কাছে থাকবে কে ? —কাল আসবো । ওর মাও ওকে বুঝিয়ে বলেছিল—খোক, তুই যাবি আমি কার কাছে থাকবো ? —কাল অসবো । —না, আমি থাকতে পারবো না । —তোমার জন্যে মুকি (মুড়কি ) কিনে নিয়ে আসবো । যেদিন আসে, সেদিন সকাল থেকে খোকা ব্যস্ত হয়ে মাকে বলতে লাগলো—ম, আমার জামা দ্যাও । —কেন রে ? —বাবার সঙ্গে যাবো । —কোথায় যাবি ? —কলকাতা । —আবার আসবি কবে ? —কাল আসবো । কিছুতেই ছাড়লে না খোক, জাম গায়ে দিয়ে ইন্টিশনে এল । গাড়ী এলে বাবার কোল আঁকড়ে জাম টেনে ধরে রাখলো। এঞ্জিনটা সশকে প্ল্যাটফর্মে ঢুকবার সঙ্গে সঙ্গেই সে বাবার জামা মোক্ষম এটে ধরলে—খানিকট। এঞ্জিনের ভয়ে, খানিকটা বাবা পাছে পালায় ওকে ফেলে সেই ভয়ে । তখন সে দিশাহারা হয়ে বলচে–ও বাবা, আমি যাবো আমি ন’টার গাড়ীতে যাবে। —আমি তোর সঙ্গে যাবে বাবা । গাড়ী বাঁশি দিলে। কত বোঝালে সীতানাথ, খোকার এক বুলি তার আকুল কান্নার মধ্যে —আমি তোমার সঙ্গে যাবো বাবা—আমি ন’টার গাড়ীতে যাবো— গাড়ীর লোক এবং স্টেশনের লোক হাসতে লাগলো ব্যাপার দেখে । সীতানাথ নিৰ্ম্মম ভেেব খোকার হাত জোর করে ছাড়িয়ে দিলে এবং খোকাকে তার জ্যাঠতুতো ভাইয়ের মেয়ের কোলে দিয়ে ছুটে এসে ট্রেনে উঠলো। ধীরে ধীরে ট্রেন স্টেশন ছাড়লো। খোকা আছাড়ি-পিছাড়ি খেয়ে আৰ্ত্তনাদ করচে বীণার কোলে—ও বাবা, আমাকে নিয়ে যা, আমি ন’টার গাড়ীতে যাবো —আমায় নিয়ে যা— গাড়ীতে উঠে পেছন দিকে সীতানাথ চেয়ে দেখলে খোকাকে ।