পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৪৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কুশল পাহাড়ী ՅՖ পরকে শাসন করা, চোখ রাঙানো ভুলেই গেলেন । একদিন ঘাটের পথে নির্জন বঁাশ বনে সন্ধ্যার কিছু আগে রামযাদু জেলের বিধবা অল্পবয়সী পুত্রবধু তার আড়াই বছরের ছেলের সঙ্গে নদীর ঘাট থেকে ফিরচে—এমন সময় হঠাৎ হরিকাকাকে সামনে দেখে মেয়েটি ভৗত ও সন্ত্রস্ত হয়ে উঠলো । হরিকাকার ভয়ে পাড়ার কি-বৌয়ের অনেকদিন থেকে একা নদীর ঘাটে যাওয়া ছেড়ে দিয়েছিল, একথাটি আগে বলা দরকার । মেয়েটি থমকে আড়ষ্ট হয়ে দাড়িয়ে গেল। সৰ্ব্বনাশ! হরি মুখুজে যে এগিয়ে আসেন তার দিকে ! খোকা পিছিয়ে এসে ততক্ষণ মায়ের আঁচল মোক্ষম জড়িয়ে ধরেচে, তার ভীত দৃষ্টি হরিকাকার মুখের দিকে নিবন্ধ। হরিকাকা কিন্তু মেয়েটির কাছে এগিয়ে এসে সমেহ স্বরে বল্পেন—ম, ভয় কি ? নির্ভয়ে ঘাটে পথে বেরিও মা । এই খোকাকে কষ্ট দিয়ে কেন সঙ্গে এনেচ ? ও কি এতটা পথ হাটতে পারে ? ছিঃ—কোনো ভয় নেই । তুমি আমার মেয়ের সমান। আমি তোমার বাবা, বাবাকে দেখে ভয় কি মা ? যাও । মেয়েটি হেঁট হয়ে হরিকাকাকে প্রণাম করে তাড়াতাড়ি বাড়ী চলে এসে পাড়ার মেয়েমহলে একথা জানায় । এর ছতিন দিন পরে রামযাদু একটা কাতলা মাছ হাতে হরিকাকার বাড়ী এসে তাকে দিয়ে বঙ্গে—আপনার মেয়ে পেটিয়ে দিয়েচে । বল্পে, মোয় বাবাঠাকুরকে দিয়ে এসো। তা নেন দয়া করে। হরিকাকা চণ্ডীমণ্ডপে বসে তেল মাখছিলেন, কাছে নিরু গোয়ালিনী বসে দুধের হিসাব করছিল, চোখ তুলে বল্পেন—কি ? কিসের মাছ ? —আপনার মেয়ে পেটিয়েচে । জেয়ানাতে পেয়েলাম, আপনার মেয়ে বল্পে, বাবাকে দিয়ে এসো-— —ও হবে না । —কেন বাবা ঠাকুর ? —গরিব লোকের মাছ আমি বিনি পয়সীয় নিতে পারবো না । এ ধরনের কথা এ অঞ্চলে কেউ কখনো বলে না, বিশেষ করে হরিরুক তো এমন প্রকৃতির লোকই নয়। রামযাদু একটু অবাক না হয়ে পারলে না। তবুও মাছটা সে নামিয়ে রেখে চলে যাচ্ছিল, হরিকাকা বলেন—না, শোন, ও রামযাদ্ধ, মাছ আমি নেবো না। ওর ন্যায্য দাম দেওয়ার আমার ক্ষমতা নেই। স্বতরাং মাছও আমি নেবো নী— g শেষ পর্য্যস্ত রমযাজুকে মাছ ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হল। রামযাজুর স্ত্রী এর পর একসময়ে এসে খানিকটা কাটা মাছ রাঙা খুড়ীমার কাছে লুকিয়ে দিয়ে গিয়েছিল। এই রকম দুএকটা নতুন ধরনের কাজ করার পর হরিকাকা একদিন সকালে উঠে ভৈরবীর মন্দিরে চলে গেলেন—জার ফিরলেন না । ভৈরবীর কাছে সৃদ্ধান নেওয়া হয়েছিল ।