পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৪৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কুশল পাহাড়ী 8to রাজা শুদ্ধোধনকে পুনরায় বিবাহ দিলে মহামায়ার বড়দিদি মায়ার সঙ্গে । তারপর মহামায়ার কোলে এলেন সিদ্ধার্থ। তার কতদিন পরে মায়া পেলেন আয়ুষ্মান নন্দকে নিজের ক্রোড়ে । সেই নন্দ ! কপিলাবাস্ত নগরীর সমাজস্থান, চতুষ্পথ, হট, ক্রীড়াস্থান অন্ধকার করে যেদিন রাজকুমার সিদ্ধার্থ গভীর নিশীথে গৃহত্যাগ ক'রে চলে গেলেন, সেদিন এই নন্দই ছিলেন রাজা শুদ্ধোদনের ও মায়ার একমাত্র ভরসা। নন্দ তখন বালক, দাদা গৃহত্যাগ করাতে তিনি কেঁদে আকুল হয়েছিলেন। বড় ভালবাসতেন তিনি দাদাকে । কপিলাবাস্তুর রাজভবন, প্রাচীর, গোপুর ও চত্বর হাহাকারে ভরে গিয়েছিল সেদিন । ইতিমধ্যে আয়ুষ্মান রাজকুমার নন্দ যৌবনাবস্থায় উপনীত হয়েছেন, জ্যেষ্ঠের গুণগান ও যশঃসৌরভ স্বদূর কাশী, রাজগৃহ ও পাটলিপুত্র থেকে বাতাসে বহন করে এনেছে কপিলাবাম্বর চতুষ্পথে । ভগবান জিন দেবতা, তিনি মহাবাণী প্রচার করেছেন দিকে দিকে। রাজগুহের নৃপতি ও শ্রেষ্ঠদের শিরোভূষণ তার সেই দাদার পদগ্রান্তে আনমিত হয়েছে—এ কথাও কত লোকের মুখে মুখে এসে পৌঁছেচে এখানে । কতকাল পরে সেই তার দাদা প্রত্যাগমন করেছেন কপিলাবাস্তুতে। আজ কত আনন্দের.দিন শাক্যকুলের ! অবশ্য তিনি প্রাসাদে আসেন নি, ন্যগ্রোধারাম বিহারে শিষ্যপরিকৃত হয়ে বাস করছেন। কাল সন্ধ্যায় এসেছিলেন কনিষ্ঠ ভ্রাতা আয়ুষ্মান নন্দের আলয়ে ভিক্ষা করতে। ভ্রাতৃবধু কল্যাণী ভদ্রা অত্যস্ত আদর ক'রে তাকে অন্ন পরিবেশন করেছিলেন, অতি স্বস্বাদু অন্ন। যাবার সময় অনেকগুলো স্বপক্ক ফল দিয়েছিলেন সঙ্গে নিয়ে যাবার জন্যে। ভগবান তথাগত কনিষ্ঠকে আদেশ করে গেলেন—এ ফলগুলো তুমি কাল সকালে নিশ্চয়ই আমার কাছে নিয়ে আসবে। তুমি নিজে এসো । অন্য কারও হাতে পাঠিও না। তাই আজ রাজকুমার নন্দ সেই ফলগুলি একটি বেতসলতায় প্রস্তুত আধারে রক্ষা ক’রে আধারটি হাতে ঝুলিয়ে নিয়ে চললেন । স্বন্দরী ভদ্রাকে ছেড়ে নন্দ একদওওঁ থাকতে পারেন না কোথাও ! মাত্র সম্বৎসর অতীত হয়েছে নন্দ, বিবাহ করেছেন । নবপরিণীত কিশোরী পত্নীকে চোখের আড়াল করার সাধ্য নেই নন্দের । দুজনে মিলে একসঙ্গে অঞ্জন, অভ্যঞ্জন, স্নান, গাত্রসংবাহন, আমিষ ও মধু সেবন, চিত্ৰকৰ্ম্ম, মালাধারণ, ছন্দন-অনুলেপন—এই সব চলছে। এই কয়দিনের প্রতিদিনই নন্দ জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা মহাগুরু ভগবান তথাগত জিনকে দর্শন করতে গিয়েছেন–কিন্তু না, বেশিক্ষণ থাকতে পারেন নি। সৰ্ব্বদা ভদ্রার মুখ মনে পড়ে । সমস্ত জগতের মধ্যে ওই একখানি স্বন্দর মুখ গড়েছিলেন বিধাতাপুরুষ। ওই একখানি রূপের মধ্যে সারা পৃথিবীর রূপের মঞ্জুৰা। ওকে বলে বোঝাতে হয়না, ফুটন্ত ফুলের মত ওর বাণী ওর রূপের মধ্যেই মুখর হয়ে উঠেছে দিনরাত । o ভগবান জিন বলতেন, নন্দ, এখুনি যাবে?