পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৪৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8心8 বিভূতি-রচনাবলী করবার চেষ্টায় সারাদিন বেশ কেটে যায় ; কিন্তু সন্ধ্যার অন্ধকারে পদচিহ্নহীন প্রাস্তরের দিকে চেয়ে মন কেমন ক'রে ওঠে। মনে হয় কতদূরে সে দাড়িয়ে আছে ব্যাকুল প্রতীক্ষায় সেই গৃহদ্বারটিতে। এখনও সে আশা ছাড়েনি তার। ভদ্রার সঙ্গে আর দেখা হয়নি। যেদিন ভিক্ষা করতে গিয়েছিলেন, সেদিন রাজপ্রাসাদে মহাপ্রজাপতি মাতা গোমতী তাকে ভিক্ষা দিয়েছিলেন ; কিন্তু ভদ্র মূচ্ছিতা ও জ্ঞানহীনা ছিল প্রাসাদকক্ষে, ভিক্ষুর কাবায়বেশে তার আগমন শ্রবণ করে। আয়ুষ্মান নন্দের সঙ্গে ছিলেন ভিক্ষু স্থবির উপালী । নন্দের ইচ্ছা ছিল পত্নীর মূর্ছাভঙ্গের জন্যে অপেক্ষা করেন । জানবৃদ্ধ স্থবির উপালী অপেক্ষা করতে দেননি নন্দকে । বলেছিলেন, চল, চল, আয়ুষ্মান ৷ জননীর নিকট ভিক্ষা করলেই বিনয় প্রতিপালিত হল । যাই চল । নন্দ রাজপ্রাসাদে চিত্রশিক্ষকের নিকট চিত্ৰকৰ্ম্ম শিখেছিলেন, ভাল চিত্র অঙ্কন করতে পারতেন । কিছুকাল পরে তিনি এক উপায় বার করলেন। ভদ্রাকে না দেখে আর সত্যি থাকা যায় না। এক এক নির্জন সন্ধ্যায় মনে হয়, প্রাণ যেন আর দেহের পিঞ্জরে আবদ্ধ থাকতে চাইছে না । ছুটে বেরিয়ে যেতে চাইছে বিনয় প্রতিপালনের শৃঙ্খল থেকে, অষ্টাঙ্গিক মার্গের পাশবন্ধন থেকে, সেই বহুদূরে প্রাসাদঅলিন্দে, যেখানে এই বসন্তে নাগকেশর বৃক্ষে কুঁড়ি নেমেছে, বকুল ফুল ঝুর ঝুর ক’রে ঝরে পড়ছে শিলাবেদিকায়, অতিমুক্তলতায় কচি রাঙা পত্রের উদগম হচ্ছে ; ভদ্রা বাতায়নবলভিতে পুপমাল্য রেখে একদৃষ্টে তার আগমনপথের দিকে চেয়ে আছে। সেখানেই শান্তি, সেখানেই স্থখ। নন্দ এক প্রস্তরফলকে ভদ্রার এক প্রতিমূর্তি আঁকলেন । সেই প্রতিমূৰ্ত্তির সঙ্গে নির্জনে কথা বলেন, কত হান্তপরিহাস করেন, কখনও অশ্রপাত করেন। অনেক সময় সারারাত্রি এমন ভাবে কাটে । নন্দ আকুলম্বরে স্ত্রীর ছবির দিকে চেয়ে কত প্রেম-সম্বোধন করেন, অম্লচ্চস্বরে গান গেয়ে শোনান । নন্দের কুটিরের কাছাকাছি যে সব ভিক্ষুরা থাকেন, তারা ক্রমে ব্যাপারটা জানতে পারলেন । ছু-একজন বয়োবৃদ্ধ ভিক্ষু নন্দকে অনেক প্রবোধ দিলেন, অনেক সদ্ধৰ্ম্মের উপদেশ দিলেন। দিলে কি হবে, মন মানে না, তিন-চার মাস ধ’রে ব্যাপারটা সমানে চলতে লাগল। প্রথমে কেউ বুদ্ধদেবের কানে কথাটা তুলতে সাহস করেননি। মঠে বাস করে প্রত্ৰজ্য গ্রহণ করে এ রকম ব্যবহার সদ্ধৰ্ম্মের বিরোধী, বিনয়-আচরণের বিরোধী, সাধনঅপশুর বিরোধী। সৰ্ব্বাপেক্ষ লজ্জা ও সঙ্কোচের ব্যাপার এই যে, ইনি ভগবান জিন তথাগতের মাতৃত্বসার পুত্র । কয়েকজন ভিক্ষুতে মিলে যুক্তি ও পরামর্শ করে একদিন একজন বিজ্ঞ ভিক্ষু পাপা