পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ہ/yء প্রেমে উন্মত্ত হয়ে সংসারধর্ম চরিত্র সবকিছু বিসর্জন দিয়ে বিবাণী হ’ল। এই পদস্খলনের দুই নায়ক গদাধর ও শশাঙ্ক—দু'জনেরই পূর্ব জীবনে কোন কলঙ্কের ইতিহাস নেই। শশাঙ্ককে বরং আদর্শচরিত্র পুরুষই বলা যেতে পারে। সে গ্রামের ডাক্তার, ছেলেবেল থেকে পল্লীসংস্কার ও গ্রামের যত হিতকর প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত, সমাজের মাতব্বর। গ্রামের কোথাও কোন দুনীতি দেখলে আর রক্ষা নেই, তাকে যতক্ষণ না সমূলে বিনাশ করতে পারছেন চোখে ঘুম নেই। বিশেষতঃ স্ত্রীলোকঘটিত কোন কলঙ্কের ব্যাপার দেখলে শাস্তির ব্যবস্থা না করা পর্যন্ত যেন স্থির হতে পারেন না। দেখা যায়, কোন একটি বধূর স্বামী কলকাতায় চাকরি করেন, মাসে হয়ত একদিন কি ছুদিন দেশে যান, তার ঘরে পাশের বাড়ির একটি যুবক যাতায়াত করে। অধিক রাত্রে তাকে বধূটির ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে দেখেছে, লোকের মুখে সে খবর পেয়েই তিনি যুবকটিকে উত্তম মধ্যম প্রহার দিয়ে যেমন শায়েস্তা করতে ভোলেন নি, তেমনি সেই বন্ধটিকেও ক্ষমা করেন নি। সে কলঙ্ক এড়াবার জন্যে বন্ধটিকে আত্মহত্যা করতে হয় । এমন কি গ্রামের প্রবীণ দারোগ, এককালে সবাই র্যার ভয়ে থরহরিকম্প, শশাঙ্ক তাকেও ক্ষমা করেন নি। র্তার নামে দুনীতির অভিযোগ পেয়ে, তাকে ডেকে পাঠিয়ে অবিলম্বে গ্রাম ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যাবার আদেশ দিয়েছেন। এহেন সমাজসেবী, আদর্শবাদী গ্রামের প্রবীণ ডাক্তার, প্রৌঢ়—যার বয়স চল্লিশ, সর্বজনশ্রদ্ধেয়, তার পদস্থলন হ’ল, কোথায় এক বারোয়ারীতে গিয়ে হঠাৎ এক খেমটাউলীর নাচ দেখে !

  • অন্যদিকে দম্পতির নায়ক গদাধর। পাটের আড়তদার, ঘোরতর ব্যবসায়ী। বিলাসব্যসন কাকে বলে জানে না । মাসিক আয় যথেষ্ট হওয়া সত্ত্বেও সাধারণ মামুষের মত জীবনযাপন করে। জমিদারের মত যার স্থখ-স্বাচ্ছন্দ্যের মধ্যে থাকা উচিত, সে পুরাতন ভদ্রাসনের ভাঙা জানলায় চটের পর্দা টাঙিরে বাস করে । ওসব তার কাছে বাজে খরচ । কোন নেশাভাঙ বা বিলাসব্যসনে কখনো একটি পয়সা বাজে খরচ করে না। একমাত্র একটি নেশা আছে, পায়রা-ওড়ানো । কলকাতা থেকে পায়রা কিনে এনে দেয় তার এক বন্ধু। তারও ঘরে সতীলক্ষ্মী স্ত্রী, পুত্রকন্যা। সংসারী ও মুখী দম্পতি। এর বয়সও চল্লিশের কাছাকাছি। কলকাতায় ব্যবসা করতে গিয়ে হঠাৎ ফিল্ম-স্টার শোভারানীর সঙ্গে পরিচয় ও তাকে উপলক্ষ করে সিনেমা-জগতের মায়াময়ী উর্বশী মেনকাদের মোহে এমনি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে, যার ফলে পদস্থলন ঘটে ও পাটের ব্যবসা উঠে যায়।

যদিচ উভয় উপন্যাসের বক্তব্যে মিল ও বহু সামঞ্জস্য বর্তমান, তৰু তারই মধ্যে অতি সুক্ষভাবে বৃত্তিগত মনোভাবের যে পার্থক্যটুকু এবং তার দরুণ পদস্খলনের মধ্যেও কিছু ব্যতিক্রম ও ব্যবধানের স্বাক্ষর—ভিন্ন রসে স্বম্পষ্ট হয়ে উঠেছে। পদস্খলন উভয়েরই, তৰু তার গতিপ্রকৃতিতেও ভিন্ন স্বাদ, ভিন্ন রং এবং চরিত্রগত পার্থক্য নিজ নিজ বৈশিষ্ট্যে ফুটে উঠেছে।