পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাবলী ة ق স্বতরাং ওদেরও সরিয়ে নিয়ে যেতে চাই। নেপাল প্রামাণিক দুধ নিয়ে এল। আমি সকলকে চ পরিবেশন করলাম। আবদুল হামিদ বললে—একদিন এখানে ফিস্ট করুন ডাক্তারবাবু, আমি একটা খাসি দেবো । গোবিন্দ দা পিছপাও হবার লোক নয়, সে বললে—আমি কলকাতা থেকে ভাণ্ডুয়। ঘি আনিয়ে দেবো। হুজুরিমল রণছোড়লাল মস্ত বড় বিয়ের আড়তদার, পোস্তার খাটি পশ্চিমে ভাদ্ধয়া। আমার সঙ্গে যথেষ্ট খাতির । আমাদের দোকান থেকে রঙ নেয় ওরা । সেবার ८छ्ॉल दि রামহরি সরকার ওকে কথা শেষ করতে না দিয়ে বললে—কিসের পশ্চিমের ঘি ? আমার ইউনিয়নে যা গাওয়া ঘি মেলে, তার কাছে ওসব কি বললে ভাদুয়া মাছুয়া লাগে না। দেড় টাকা সের গাওয়া ঘি কত চাই ? এখনি হুকুম করলে দশ সের ঘি নিয়ে এসে ফেলবে । করুন না ফিষ্টি । এরা যে আবার আসরে গিয়ে বসে, এ যেন আমি চাই নে ৷ ছুতো নাতীয় দেরি হয়ে যাক এ আমারও ইচ্ছে। সুতরাং আমি এদের ওই স্কুল ধরনের কথাবাৰ্ত্তীয় উৎসাহের সঙ্গে যোগ দিলাম। আরও পাচরকম ঘি-এর কথা হোল, কি কি খাওয়া হবে তার ফর্দ হোল, কবে হতে পারে তার দিন স্থির করতে কিছু সময় কাটলো । ওরা আসরে গিয়ে মেয়েটিকে না দেখুক । নেপাল প্রামাণিক এই সময় আমায় হাতজোড় করে বললে—একটা অঙ্গুরোধ আছে, আমার বাড়ীতে লুচি ভেজেচে । বড়বে যত্ন করে ভাজচে আপনার জন্যে। একটু পায়ের ধুলো দিতে হবেই। আমার নিজেরও ইচ্ছে আর আসরে যাবো না । ওর ওখানে খেতে গেলে যে সময় যাবে, তার মধ্যে খেমটার আসর ভেঙ্গে যাবে। বললাম-বেশ, তাতে আর কি হয়েচে । চলে যাই । নেপাল প্রামাণিকের বড় চৌচালা ঘরের দাওয়ায় আমার জন্যে খাবার জায়গা করা হয়েচে, নেপাল প্রামাণিকের বড় বেী থালায় গরম লুচি এনে পরিবেশন করলে । বড় ভক্তিমতী হীলোক, ব্রাহ্মণের ওপর অমন ভক্তি আজকার কালে বড় একটা দেখা যায় না। আমার সঙ্গে কথা বলে না, তবে আকারে ইঙ্গিতে বুঝতে পারি ও কি বলতে চাইচে। যেমন একবার লুচির থালা নিয়ে এসে চুপ করে দাড়িয়ে রইল, আমি বললাম—ন মা, আর লুচি দিতে হবে না । নেপালকে আমার অদূরে খাবার জায়গা করে দেওয়া হয়েচে । সে বললে--নিন নিন ডাক্তারবাবু, ও অনেক কষ্ট করে আপনার জন্যে লুচি ভেজেচে । সন্দে থেকে আমাকে বলচে ডাক্তারবাবুকে অবিপ্তি করে খেতে বলব। বড়বৌয়ের ঘোমটার মধ্যে থেকে মৃদ্ধ হালির শব্দ পাওয়া গেল ।