পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

খান-আষ্টেক গরম লুচি চুড়ির নঠান শক্সের সঙ্গে পাতে পড়লো। উ ছ হ-এত কেন ? কি সৰ্ব্বনাশ ! বড় বেী ফিস্ ফি করে অদূরে ভোজনরত নেপালের কানের কাছে মুখ নামিয়ে কি বললে, নেপাল আমায় বললে—বড়বে বলচে ডাক্তারবাবুর ছোকরা বয়েস, কেন খাবেন না এ ক’খানা লুচি—এই তো খাবার বয়েস । আমি বললাম—আমার বয়েস সম্বন্ধে মায়ের একটু ভুল হচ্চে । ছোকরা বড় নই, পয়ত্রিশের কোঠায় পা দেবো আশ্বিন মাসে । আবার ফিস্ ফি শব্দ। নেপাল তার অনুবাদ করে বললে—-বড়বে হাসচে, বলচে, ওর ছোট ভাইয়ের চেয়েও কম বয়েস । আ ম জানতাম নেপালের দুই সংসার । কিন্তু ওর বড় বৌটি সত্যই সুন্দরী, এর আগেও দুবার দেখেচি বৌটিকে। বয়েস চল্লিশের ওপরে হোলেও দীর্ঘকাল নিঃসন্তান ছিল বলেই হোক বা যে কারণেই হোক, এখনো বেশ আঁটসঁাট গড়ন, দিব্যি স্বাস্থ্যবর্তী, গায়ের রঙ পচিশ বছরের যুবতীর মত। বেশ শাস্ত মুখশ্ৰী । আমি উত্তর দিলাম--মাকে বল আর দুখানা পটলভাজা দিতে— বৌটি পটলভাজা পাতে দিলে এনে । আমি মুখ তুলে তাকেই উদ্বেগু করে বললাম–আচ্ছা, এ রকম কেন মা করে, বলে। তো ? চমৎকার রান্না কিন্তু মুন দাও না কেন ? সেবার ও তাই, এবারও তাই। সেবার বলে গেলাম তোমায়, তুমি মুন দি ও তরকারিতে, ওতে আমার.জাত যাবে না। তবুও মুন দাও নি এবার । বড় বে। এবার খুব জোরে ফিসফিস করলে এবং খানিকক্ষণ সময় নিয়ে। নেপাল হেসে বললে—বড়বে বলচে ব্রাহ্মণের পাতে মুন দিয়ে তরকারি রোধে দেবো সে ভাগ্যি করি নি। এ জন্মে আর তা হয়ে উঠবে না । নরকে পচে মরবো শেষে ? ছোট জাত আমরা— —ও সব বীজে কথা । —না ডাক্তারবাবু, আপনাদের মত অন্যরকম। আপনার ইংরেজী পড়ে এ সব মানেন না, কিন্তু ভগবানের কাছে দোষী হতে হবে তো ? —ইংরেজী পড়ে নয় নেপাল, মানুষের সঙ্গে তফাৎ স্বষ্টি করেচে সমাজ, ভগবানকে টেনো ন} এর মধ্যে । —ভগবান নিজেই ব্রাহ্মণের পায়ের চিহ্ন বুকে ধরে আছেন। আছেন কি না আছেন বলুন ? —আমি দেখি নি ভগবানকে, ঙার বুকে কি আছে না আছে বলতে পারবে না। কিন্তু নেপাল, এটুকু তুমিও জানো আমিও জানি, তার দেওয়া ছাপ কপালে নিয়ে কেউ পৃথিবীতে আসে নি।