পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8(9 বিভূতি-রচনাবল —তুমি এখানে এসে বসে আছ, তোমার সঙ্গের মেয়েটা কি ভাববে ? —ভাবুক সে। আমার তাতে কি ? —তুমি তো দেখচি খুব ছেলেমাহুষ—তোমার কথার স্বরেই তার প্রমাণ। পান্না চোখের ভুরু ওপর দিকে ছবার তুলে আবার নামিয়ে চোখ নাচিয়ে কৌতুকের স্বরে বললে—স্থ-উ-উ ? இ শেষের দিকের জিজ্ঞাসার স্বরটা নিরর্থক । কি মুনীর হা স ফুটে উঠলে ওর মুখে ! আমার হঠাৎ মনে হল ওকে আমি বুকে টেনে নিয়ে ওর ফুলের মতো লাবণ্যভর। দেহট পিষে দিই বলিষ্ঠ বাহুর চাপে ! মাথার মধ্যে রক্ত চন্‌ চন্‌ করে উঠলো। আমি চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়ি। এ অবস্থা ভাল নয়। ও এখান থেকে চলে যাকৃ। ছিঃ– —পান্না, তুমি চলে, এগিয়ে দিয়ে আসি। —আপনি বড় মজার লোক কিন্তু—আমি কেন এসেছিলাম জিজ্ঞেস করলেন না যে ? —তুমি বললে না তে। আবার জিগ্যেস করে কি হবে ? তুমি এক নম্বরের দুই— পান্না । —‘পান্না’ কেন, আমার ভালো নামে ডাকুন না ? স্ব-ধী-র ব-লা— —ওর চেয়ে পান্না ভালো লাগে—সত্যি বলচি । আমিও সত্যি বলচি আপনাকে আজ রাত্রে— এই পৰ্য্যস্ত বলেই কি একটা বলবার মুখে হঠাৎ থেমে গিয়ে ও সলজ্জ হেসে মুখ নীচু করে চুপি চুপি কি কতকগুলো কথা আপনা-আপনি বলে গেল। • --কি বললে ? —বলচি এই গিয়ে—আপনাকে আজ রাত্তিরে-এ-এ— আ:, লজ্জায় তো ভেঙে পড়লে । বলো না কি ? —আমার লজ্জা করে না বুঝি ! আমি যাই—এগিয়ে দিন। আমি উঠলাম। আমার সম্বিং ফিরে এসেচে। আমি চিকিৎসক, আমার ডাক্তারখানায় সমাগত একটি রোগিণীর সঙ্গে রাতদুপুরে বিশ্রস্তালাপ শোভা পায় না আমার। পয়ত্রিশ বছর বয়েস হয়েচে । বিবাহিত ভদ্রলোক । বললাম—চলো না, ওঠে । এগিয়ে দিয়ে আসি--- হরি ময়রার দোকান পর্যস্ত এসে দেখি আসরের দিকে তখনও মেলা লোকের ভিড় । কেউ পানবিড়ি খাচ্চে, কেউ জটলা করে গল্প করচে। স্থানীয় বাজারের লোকে এখনও এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে, পানবিড়ির দোকান এখনও খোলা । পান্না নিজেই আমার দিকে চেয়ে সলজ কুষ্ঠায় ভদ্রম্বরের বন্থটির মত বললে—আপনি যান, লোকের ভিড় রয়েচে । আপনাকে দেখতে পাবে। আমি দাড়িয়ে আছি, ও চলে যাচ্চে—যেতে যেতে হঠাৎ মূখ ফিরিয়ে আমার দিকে চেয়ে বললে—আজ আমাদের শেষ দিন—জানেন তো ?