পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

to বিভূতি-রচনাবলী সনাতনদা ভেবে বললে—তা তোমাকে খাতিরে পড়ে যেতে হয়। পাচজনে বলে, তুমি হোলে ডাক্তারমানুষ— সনাতনদী আর ও সম্বন্ধে কিছু বললে না । অন্য কথাবাৰ্ত্তা খানিকক্ষণ বলে উঠে চলে গেল। আমি বাড়ীর ভেতর গিয়ে স্বানাহার করে নিয়ে ওপরে শোবার ঘরে যেতেই স্বরবালা এসে ঘরের জানালা বন্ধ করে দিয়ে গেল । চোখে আলো লাগলে দিনমানে আমার ঘুম হয় না সে জানে। কতক্ষণ ঘুমিয়েছি জানি নে, উঠলাম যখন তখন বেলা বেশি নেই। তখুনি সুরবালা চা নিয়ে এল, বললে—ঘুম হয়েচে ভালো ? এর মধ্যে কাপাসডাঙা থেকে একটা রুগী এসেছিল, বলে পাঠিয়েচি, বাবু ঘুমুচ্চেন। তারা বোধ হয় এখনো বাইরে বসে আছে। শক্ত কেস । বললাম—আমাকে আজও মঙ্গলগঞ্জে যেতে হবে। —আজও ? কেন গা ? স্বরবালা সাধারণতঃ এরকম প্রশ্ন করে না। খাটি মিথ্যে কথা ওর সঙ্গে কখনো বলি নি । ংক্ষেপে বললাম—দরকার আছে । যেতেই হবে। —কাপাসডাঙায় যাবে না ? —না । যেতে পারা যাবে না । এদিকে কাপাসডাঙার লোকে যথেষ্ট পীড়াপীড়ি শুরু করে দিলে। তাদের রুগীর অবস্থা খারাপ, যত টাকা লাগে তা দেবে, অবস্থা ভালো, আমি একবার যেন যাই । ভেবে দেখলাম কাপাসডাঙায় রুগী দেখতে গেলে সারা রাত কাটলে যেতে আসতে । সে হয় না । মাঝিকে নিয়ে সন্ধ্যার পরেই রওনা হই। মঙ্গলগল্প পৌছবার আগে আমার বুকের মধ্যে কিসের ঢেউ যেন ঠেলে উঠচে বেশ অঙ্গভদ করি! মূখ শুকিয়ে আসচে। হাত-পা ঝিম্ ঝিম্ করচে। এ আবার কি অনুভূতি, আমার এত বয়স হোল, কখনও তো এমন হয় নি। একটি ভয় মনের মধ্যে উকি মারছে। পান্না আজ হয়তো অন্য রকম হয়ে গেছে। আজ সে হয়তো আর আমাকে চিনতেই পারবে না। তা যদি হয়, সে আঘাত বড় বাজবে বুকে । গোবিন্দ দা দেখি ডাক্তারখানায় বসে । আমায় দেখেই দাত বের করে বললে—হে হেঁ ডাক্তারবাবু যে ! এসেচেন ? —কি ব্যাপার ? —ব্যাপার কিছু নয়। ভাগ্যিস আপনি এলেন ? —আমি ? কেন অম্বখ বিমুখ কারো ? গোবিন্দ দা স্বর নিচু করে বললে—অস্থখ যার হবার, তার হয়েছে। একজন যে মরে । সকাল থেকে সতেরো বার এনকুয়ারি করচে ডাক্তারবাবু আজ আসবেন তো ? আপনি না এলে তার অবস্থা যে কেষ্ট-বিরহে রাধার মত।