পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૭૨ বিভূতি-রচনাবলী মনে ভাবলাম—যাই না কেন বাড়ীতে। স্বরবালার সঙ্গে দেখা করে আবার আসবে | a على কিন্তু শেষ পর্যন্ত যাওয়া হল না, নিয়তির ফল বোধ হয় খণ্ডন করা দুঃসাধ্য। যদি যেতাম বাড়ীতে মাঝির কথায়, তবে হয় তো ঘটনার স্রোত অন্য দিকে বইতে। কিন্তু আমি ডাক্তারি পাশ করেছিলাম বটে মেডিকেল কলেজ থেকে, তবুও আমি মুখ। ডাক্তারি শাস্ত্র ছাড়া অন্য কোনো শাস্ত্র আমি পড়ি নি, ভালো কথা কোনো দিন আমায় কেউ শোনায় নি, জীবনের জটিলতা ও গভীরতা সম্পর্কে কোনো ধারণাই নেই আমার । সরল ও অনভিজ্ঞ মন নিয়ে পাড়াগায়ের নিরক্ষর রোগীদের হাত দেখে বেড়াই। যাওয়া হলে না, কারণ গোবিন্দ দা ও আবদুল হামিদ এসে প্রস্তাব করলে আজ একটা বনভোজনের আয়োজন করা যাক। আমি দেখলাম যদি পিছিয়ে যাই তবে ওরা বলবে, ডাক্তার টাকা দিতে হবে বলে পিছিয়ে গেল। ওদের মঙ্গলগঞ্জ থেকে বছরে অনেক টাকা আমি উপার্জন করি, তার কিছু অংশ ন্যায্যত আমোদ-প্রমোদের জন্যে দাবি করতে পারে । বললাম—কি করতে চাও ? যা চাও দেবো । আবদুল হামিদ বললে—ভালো একটা ফিষ্টি। গোবিন্দ দা বললে—আপনার নৌকোটা নিয়ে চলুন মহানন্দ পাড়ার চরে। দুটো মুরগি যোগাড় করা হয়েচে, আরও দুটো নেবো। পোলাও, না ধি-ভাত, না লুচি যা-কিছু বলবেন আপনি । আমি বললাম—আমি দাম দিয়ে দিচ্ছি জিনিসপত্তরের। তবে আমাকে জড়িও না। দুজনেই সমস্বরে হৈ চৈ করে উঠলো। তা কখনো নাকি হয় না। আমাকে বাদ দিয়ে তারা স্বর্গে যেতেও রাজী নয়। গোবিন্দ দা বললে—কেন, মুরগিতে আপত্তি ? বলুন তো বাদ দিয়ে সেখহাটি থেকে উত্তম মগুলের ভেড়া নিয়ে আসি ? পনেরো সের মাংস হবে। আমি বললাম—আমায় বাদ দাও । —কেন, বলুন । - খুব সামলে গেলাম এ সময়। মুখ দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিল আর একটু স্থলে যে, আমার মন ভালো নয়। ভাগ্যিস সে কথা উচ্চারণ করি নি। ওরা তখুনি বুঝে নিত। ঘুঘু লোক সব। বললাম—শরীর খারাপ হয়েচে । গোবিন্দ দা তাচ্ছিল্যের স্বরে বললে—দিন, দিন, দশটা টাকা ফেলে দিন। শরীর খারাপ টারাপ কিছু নয়, আমরা দেখব এখন। মাছের চেষ্টায় যেতে হবে । তা হলে আপনার নেীকে ঠিক রইল কিন্তু ! - —মাঝিকে বাড়ী পাঠাবো ভেবেছি । আমি যাচ্চি নে খবরটা দিতে হবে তো । —কালও তো যান নি।