পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ԳԵ- বিভূতি-রচনাবলী ভালোবাসা আমাকে জয় করে নিতে হবে এই আমার বড় উদ্দেশ্য জীবনের। এখন যেটুকু ভালোবাসে, ওটা সাময়িক মোহ হয় তো। ওটা কেটে যাবার আগে আমি ওকে এমন ভালোবাসাবে যে আর সমস্ত কিছু বিস্বাদ হয়ে যাবে ওর কাছে। এই আমার সাধনা, এই সাধনায় আমায় সিদ্ধিলাভ করতে হবে । আমাকে পাগল করে দিতে হবে । আমার জন্তে পাগল করে দিতে হবে । 顱 পান্নাকে দেখবার জন্যে ওদের বাড়ীতে ঘন ঘন যাতায়াত করবার সাহস আমার হল না। ওর মাসীর মুখের দিকে চাইলে আমার সাহস চলে যেতো। একদিন পান্নাকে বললাম—চলো, আমার সঙ্গে । পান্না হেসে বললে—কোথায় যাবো ? —যে রাজ্যে মাসী পিসীরা নেই। পান্না খিলখিল কবে হেসে উঠে বললে—কোথায় ? নদীর ওপারে ? তারপর অপূর্ব ভঙ্গিতে ঘাড় দুলিয়ে দুলিয়ে বলতে লাগলো—বলি—উত্তরপাড়া ? কোন্নগর ? হুগলী ? 一丙} —তবে ? —আমি যেখানে ভালো বুঝবো । যাবে ? —নিশ্চয়ই । —এখুনি ? - —এখুনি। পান্নাকে আমি খুব ভালোভাবে চিনি নে বটে কিন্তু আমি মানুষ চিনি। ওর চোখের দিকে চেয়ে বুঝলাম পান্না মিথ্যে কথা বলচে না। ও আমার সঙ্গে যেতে রাজী আছে, যেখানে ওকে নিয়ে যাবো। শুধু এইটুকু জানা বোধ হয় আমার দরকার ছিল। যে-ই বুঝলাম ও আমার সঙ্গে যতদূর নিয়ে যাবো যেতে পারে, তখনই আমি একটা অদ্ভূত আনন্দ মনের মধ্যে অস্তুভব করলাম। সে আনন্দ একটা নেশার মত আমাকে পেয়ে বসলে। সে নেশা আমাকে ঘরে থাকতে দিলে না—সোজা এসে বড় রাস্তার ওপর পড়লাম। সেখান থেকে ট্রামে গড়ের মাঠে এসে একটা গাছের তলায় বেঞ্চিতে নির্জনে বসলাম । হাতে কত টাকা আছে ? কুড়ি পচিশের বেশি নয়। এই টাকা নিয়ে কতদূর যেতে পারি দু'জনে ? কাশী হয় তো ! ফিরতে পারবে না। ফিরবার দরকারও নেই। আর আসবে না। সব ভুলে যাবো, ঘর বাড়ী, স্বরবালা, ছেলেমেয়ে । ওসবে আমার কোন তৃপ্তি নেই। সত্যিকার আনন্দ কখনো পাই নি। এবার নতুন ভাবে জীবনযাত্রা আরম্ভ করবো পান্নাকে নিয়ে। আজ রাত্রেই যাবো । মাতালের মত টলতে টলতে বড় রাস্তায় এসে ট্রাম ধরলাম। এমন সময় পেছন থেকে কে বলে উঠলো—কি রে, শোন, শোন—