পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/১০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাবলী سیbسb এসেচে । সীতা খুব শক্ত মেয়ে । সে কেঁদেকেটে আকুল হয়ে পড়লো না। আমায় বললে—ছোড়দা, আমার বালাজোড়াটা দিচ্চি, তাই দিয়ে ভাল ডাক্তার নিয়ে এস। এখানকার হরি ডাক্তার তো ? তার কাজ নয়। আমি অক্ষমতার লজ্জার কুষ্ঠিত মুরে বললাম—তার পর তোর শ্বশুরবাড়ির লোকে তোকে বকবে । সে কি ক'রে হয়— সীতা বললে—ইস্ ! বক্বে কিসের জন্তে, বালা কি ওদের ? মায়ের বাল, মা দিয়েছিলেন বিয়ের সময়। বাবা গড়িয়ে দিয়েছিলেন মাকে । তুমি বালা নিয়ে যাও, তারপর ওরা যা বলে বলবে— এই সময় সীতার স্বামী ঘরে ঢুকল। আমি যে-রকম চেহারা কল্পনা করছিলাম, লোকটা তার চেয়েও খারাপ। কালো তো বটেই, পেটমোটা, বোধ হয় পিলে আছে, কাঠখোটা গড়ন, চোয়ালের হাড় উচু—গায়ে একটা ছেলেমানুষের মত ছিটের জাম, একটা রাঙা আলোয়ান, পায়ে কেম্বিসের জুতো ! আমায় দেখে দাত বার করে হেসে বললে—এই যে, ছোটবাবু না ? কখন আসা হ’ল ? বড়বাবু বুঝি এখনও আসবার ফুরস্কৎ পাননি—তার পর অসুখটা কি ?” এখন কেমন আছেন ? তারপর সে খানিকক্ষণ বসে থেকে বললে—বসো তোমরা । আমি জ্যাঠাইমাদের সঙ্গে দেখা করে আসি—একটু চায়ের চেষ্টাও দেখা যাক, গরুর গাড়িতে গা-হাত ব্যথা হয়ে গিয়েচে । ওর কথার ভঙ্গিতে একটা চাষাড়ে ভাব মাখানো। এই লোকটা সীতার স্বামী সীতার মত মেয়ের | সীতাকেও আমরা সবাই মিলে উপেক্ষা করেচি। এই সময় হঠাৎ শৈলদিদির কথা আমার মনে পড়ল। শেয়ালদ’ স্টেশনে ছোট বৌঠাকরুন বলেছিলেন শৈলদি এখানেই অাছে। সীতার বালাজোড়াটা নেব না—ওকে তার জন্যে অনেক দুঃখ পোয়াতে হবে সেখানে ও যে-রকম চাপ মেয়ে, কোন অভিযোগ করবে না কখনও কারু কাছে ৷ শৈলদিদির কাছ থেকে টাকা ধার নেবো, মায়ের অমুখের পরে যে ক’রে হোক দেনা শোধ হবেই। একবার বাড়ির মধ্যে গিয়ে দেখি সীতার স্বামী ওদের রান্নাঘরে বসে কে হাতে তামাক খেতে খেতে খুব গল্প জমিয়েচে—আমার খুড়তুতো জ্যাঠতুতো ভায়েদের সকলেরই প্রায় বিয়ে হয়ে গিয়েচে এবং বৌয়েরা সকলেই ওর শালজি—তাদের সঙ্গে । রাত দশটার সময় শৈলদিদি এসে হাজির । আমায় দেখে বললে—এই যে সন্নিসী-ঠাকুর, ফিরে এসেচ দেখচি। এই যে সীতা—এস এস, সাবিত্ৰীসমান হও, কখন এলে ভাই ? আমি শুনলাম এই খানিকট আগে, আমাদের ও-পাড়ায় কে খবর দেবে বল । আমি আর সীতা শুধু ঘরে মায়ের পাশে বসে। সীতার স্বামী খেয়ে-দেয়ে শুয়েচে, অবিপ্তি সে বসে থাকতে চেয়েছিল—আমি বলেছিলাম, তার দরকার নেই, তুমি খেয়ে একটু বিশ্রাম কর —দরকার হলে ডাকব রাত্রে । শৈলদিদিও রাত্রে থাকতে চাইলে, বললে—আজ রাতে লোকের দরকার। তোরা দুটিতে মোটে বসে আছিল । আমি থেয়ে আসি, আমিও থাকব । আমি বললাম—না শৈলদি, আমরা দুজন আছি, ভগ্নীপতি এসেচে—তোমার আর কষ্ট করতে হবে না । তারপর বাইরে ডেকে টাকার কথা বললাম। শৈলদি বললে—কত টাকা ?