পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/১০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দৃষ্টি-প্রদীপ ΦΦ ভাবলুম, কোথায় যাওয়া যায় ? কলকাতায় গিয়ে একটা চাকুরি দেখে নেবো ? দাদা যদি তাতেই মুখী হয়, তাই না-হয় করা যাক। আমি নিজে বিয়ে করি আর না-করি, ওদের সংসারে কিছু কিছু সাহায্য করা তো যাবে। নৈহাটির কাছে অনেক পাটের কল আছে, কলকাতায় না গিয়ে সেখানে গেলে কেমন হয় ? পাটের কলে শুনেচি চাকুরি জোটানো সহজ । কিন্তু শেষ পর্য্যন্ত কলকাতাতেই এলাম। মাস দুই কাটল, একটা মেসে থাকি আর নানা জায়গায় চাকুরির চেষ্টা করি। কোন জায়গাতেই কিছু সুবিধে হয় না। একদিন রবিবারে ব্যারাকপুর ট্রাঙ্ক রোড ধরে বেড়াতে বেড়াতে অনেক দূর চলে গেছি, দমদমাও প্রায় ছাড়িয়েচি, হঠাৎ ঝড় বৃষ্টি এল। দৌড়ে একটা বাগানবাড়ির ঘরে আশ্রয় নিলাম। ঘরটাতে বোধ হ’ল বহুদিন কেউ বাস করে নি, ছাদ ভাঙ, মেজের সিমেন্ট উঠে গিয়েচে । বাগানটাতেও জঙ্গল হয়ে গিয়েচে । একটা লোক সেই ভাঙা ঘরের বারান্দাটাতে শুয়ে ছিল, বোধ হয় ক'দিন থেকে সেখানে সে বাস করচে, একটা দড়ির আলনায় তার কাপড়-চোপড় টাঙানো। আমায় দেখে লোকটা উঠে বসল—এসো, বসে বাবা । বেশ ভিজেচ দেখচি বৃষ্টিতে ! বসে । লোকটার বয়স পঞ্চাশের ওপর, পরনে গেরুয়া আলখাল্লা, দাড়ি-গোফ কামানো। আমায় জিজ্ঞেস করলে—তোমার নাম কি বাবা ? বাড়ি এই কাছাকাছি বুঝি ? নাম বললাম, সংক্ষেপে পরিচয় দিলাম । বললে—বাবা, ভগবান তোমায় এখানে পাঠিয়েচেন আজ। তুমি বসে, তুমি আমার অতিথি। একটু মিষ্টি খেয়ে জল খাওক আমি খেতে না চাইলেও লোকটা পীড়াপীড়ি করতে লাগল। তারপর কথা বলতে বলতে হঠাৎ ডান হাতটা শূন্তে একবার নেড়েই হাত পেতে বললে—এই নাও— হাতে একটা সন্দেশ ।. আমি ওর দিকে অবাক হয়ে আছি দেখে বললে—আর একটা খাবে ? এই নাও। হাত যখন ওঠালে, আমি তখন ভাল ক'রে চেয়ে ছিলাম, হাতে কিছু ছিল না। শূন্তে হাতথানা বার দুই নেড়ে আমার সামনে যখন পাতলে তখন হাতে আর একটা সন্দেশ। অদ্ভুত ক্ষমতা তো লোকটার। আমার অত্যন্ত কৌতুহল হ'ল, বৃষ্টি থেমে গিয়েছিল কিন্তু আমি আর নড়লাম না সেখান থেকে । লোকটা অনেক গল্প করলে। বললে—আমি গুরুর দর্শন পাই কাশীতে। সে অনেক কথা বাবা। তোমার কাছে বলতে কি, আমি বাঘ হতে পারি, কুমীর হতে পারি। মন্ত্রপড়া জল রেখে দেবে, তারপর আমার গায়ে ছিটিয়ে দিলে বাঘ কি কুমীর হয়ে যাব—আর একটা পাত্রে জল থাকবে, সেটা ছিটিয়ে দিলে আবার মানুষ হবো। সাতক্ষীরেতে ক’রে দেখিয়েছিলাম, হাকিম উকিল মোক্তার সব উপস্থিত সেখানে—গিয়ে জিজ্ঞেস ক’রে আসতে পার সত্যি না মিথ্যে। আমার নাম চৌধুরী-ঠাকুর—গিয়ে নাম করে। আমি অবাক হয়ে চৌধুরী ঠাকুরের কথা শুনছিলাম। এসব কথা আমার অবিশ্বাস হ’ত যদি না এইমাত্র ওকে খালি-হাতে সন্দেশ আনতে দেখতুম। জিজ্ঞেস করলাম—আপনি এখন কি কলকাতায় যাচ্ছেন ? —ন বাবা, মুর্শিদাবাদ জেলার একটা গায়ে একটা চাড়ালের মেয়ে আছে, তার অদ্ভুত সব ক্ষমতা। খাগড়াঘাট থেকে কোশ-দুই তফাতে। তার সঙ্গে দেখা করবো বলে বেরিয়েচি।