পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/১০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ꮬ8 বিভূতি-রচনাবলী .আমি চাকরি-বাকরি খুঁজে নেওয়ার কথা সব ভুলে গেলাম। বললাম—আমার নিয়ে যাবেন ? অবিহি যদি আপনার কোন অসুবিধা না হয় । চৌধুরী-ঠাকুর কি সহজে রাজী হন, অতি কষ্টে মত করাপুম। তারপর মেসে ফিরে জিনিসপত্র নিয়ে এলাম। চৌধুরী-ঠাকুর বললেন—এক কাজ করা যাক এস বাবা। আমার হাতে রেলভাড়ার টাকা নেই, এস ইটো যাক । ዻ আমি বললাম—তা কেন ? আমার কাছে টাকা আছে, দু'জনের রেলভাড়া হয়ে যাবে। চাড়াল মেয়েটির কি ক্ষমতা আছে দেখবার আগ্রহে আমি অধীর হয়ে উঠেচি । খাগড়াঘাট স্টেশনে পৌঁছতে বেলা গেল। স্টেশন থেকে এক মাইল দূরে একটা ছোট মুদির দোকান। সেখানে যখন পৌঁছেচি, তখন সন্ধ্যা উত্তীর্ণ প্রায়। দোকানের সামনে বটতলায় আমি আশ্রয় নিলাম। রাত্রে শোবার সময় চৌধুরী-ঠাকুর বললেন, আমার এই দুটাে টাকা রেখে দাও গে তোমার কাছে । আজকাল আবার হয়েচে চোর-ছেচড়ের উৎপাত । তোমার নিজের টাকা সাবধানে রেখেচ তো ? চৌধুরী-ঠাকুরের ভয় দেখে আমার কৌতুক হ’ল। পাড়াগায়ের মানুষ তো হাজার হোক, পথে বেরুলেই ভয়ে অস্থির । বললাম—কোন ভয় নেই, দিন আমাকে । এই দেখুন ঘড়ির পকেটে আমার টাকা রেখেচি, বাইরে থেকে বোঝাও যাবে না, এখানে রাখা সবচেয়ে সেফ-— সকালে একটু বেলায় ঘুম ভাঙল। উঠে দেখি চৌধুরী-ঠাকুর নেই, ঘড়ির পকেটে হাত দিয়ে দেখি আমার টাকাও নেই, চৌধুরী-ঠাকুরের গচ্ছিত দুটাে টাকাও নেই, নীচের পকেটে পাচ-ছ আনার খুচরা পয়সা ছিল তাও নেই। মানুষকে বিশ্বাস করাও দেখচি বিষম মুশকিল। ঘন্টন্ধুনক কাটল, আমি সেই বটতলাতে বসেই আছি। হাতে নেই একটি পয়সা, আচ্ছা বিপদে তো ফেলে গেল লোকটা ! মুদিটি আমার অবস্থাটা দেখেশুনে বললে—আমি চাল ডাল দিচ্ছি, আপনি রোধে খান বাবু। ভদ্রলোকের ছেলে, এমন জুয়াচোরের পাল্লায় পড়লেন কি ক’রে ? দামের জন্তে ভাববেন না, হাতে হ’লে পাঠিয়ে দেবেন। মানুষ দেখলে চিনতে দেরি হয় না, আপনি যা দরকার নিন এখান থেকে । ভাগ্যিস আপনার সুটকেসটা নিয়ে যায় নি! দুপুরের পরে সেখান থেকে রওনা হয়ে পশ্চিমমুখে চললাম। আমার মুটকেসে একটা ভাল টর্চলাইট ছিল, মুদিকে ওর চাল-ডালের বদলে দিতে গেলাম, কিছুতেই নিলে না। পথে হাট, একেবারে নিঃসম্বল অবস্থা। সন্ধ্যার কিছু আগে একটা বড় পাকুড়গাছের তলায় পথের ধারে জনকয়েক লোক দেখে সেখানে গেলাম। চারজন পুরুষমানুষ ও একটি ত্রিশ-বত্রিশ বছরের স্ত্রীলোক—তারা গাছতলায় উকুন জেলে রাধবার উদ্যোগ করছে। একজন বললে—কনে থেকে আসছেন বাবু ? —খাগড়াঘাট থেকে—তোমরা আসচ কোথা থেকে ? —আমরা আসতেছি তো বড় দূর থেকে। যাব কেঁদুলির মেলায়। একজন তামাক সেজে নিয়ে এসে বললে—তামাক ইচ্ছে করুন বাবু। ও জুড়ন, বাবুকে বসবার কিছু দে । —আমি তামাক খাইনে, তোমরা খাও। তোমরা দেশ থেকে বেরিয়েচ কতদিন ? জুড়ন বৈরাগী এগিয়ে এসে সঙ্গীর হাত থেকে হকোটা নিয়ে বললে—বাবু বড় কষ্ট, আর পুৰিমেতে বাড়ির বার হওয়া হয়েছে। রাস্তার কি অনাবিট। তিনদিন ধরে আর থামে না, জিনিসপত্তর ভিজে একৃশ, প্রায় পঞ্চাশ ষাট কোশ এখান খেকে-নওদ, চেনেন ? সেই