পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/১০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দৃষ্টি-প্রদীপ న(t নওদার সন্নিপত্য আমাদের বাড়ি, হাতীবাধা গ্রাম, যশোর জেলা। i গল্পগুজবে আধঘণ্টা কাটলো। জুড়ন বললে—দাদাঠাকুরের খাওয়াদাওয়ার কি হবে ? এক কাজ করুন দাদাঠাকুর, আমাদের সঙ্গে সবই আছে, রক্ষই করুন, আমরা পেরসাদ পাব এখন। ব্রাহ্মণের পাতের অন্ন কতকাল খাই নি। ও কাপাসীর মা, পুকুর থেকে জলডা নিয়ে এস, আর রাত কোরো না । আমি বিশেষ কোন আপত্তি করলাম না। এদের সঙ্গ আমার বড় ভাল লাগছিল, ওই রাত্রে তা ছাড়া যাবই বা কোথায় । রান্না চড়িয়ে দিলাম। কাপাসীর মা আলু বেগুন ছাড়াতে বসলো। ওদের মধ্যে একজনের নাম বাবুরাম—সে পুকুরে চাল ধুতে গেল। জুড়ন শুকনো কাঠকুঠে কুড়িয়ে আনতে গেল । পথের ধারে এই দরিদ্র, সরল মানুষগুলির সঙ্গে গাছতলায় রাত্রিযাপন, জীবনের এক নতুন অভিজ্ঞতা। রাতটিও বেশ, কি রকম সুন্দর জ্যোৎস্না উঠেছে! নির্জন মাঠে জ্যোৎস্নায় অনেক দুর দেখা যাচ্ছে । এই জ্যোৎস্নারাতে আমার কেবল মনে হয় আমি আর সে সব জিনিস দেখি নে । কতদিন দেখি নি। যখন চিনতে শিখি নি, তখন রোগ ভেবে যাকে ভয় করেছি কত, এখন তা হারিয়ে বুঝেছি কি অমূল্য সম্পদ ছিল তা জীবনের। বোধ হয় মাঠের ধারের এই সবুজ দুৰ্ব্বাঘাসের শয্যায় শুয়ে চোখ বুজে ভাবলে আবার দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাই—এই সব বিজন মাঠে শেষ প্রহরের জ্যোৎস্নাভরা রাত্রে মুখ উচু ক’রে চেয়ে থাকলে অনন্তপথের যাত্রীদের দেখা যায়...ওপর আকাশের জ্যোৎস্নামাখা বায়ুস্তর তাদের গমন পথে পথে দেহগন্ধে মুরভিত হয়—পরের দুঃখে কোনো দয়ালু আত্মা যে চোখের জল ফেলে, নদী-সমুদ্রে ঝিনুকের মধ্যে পড়লে তা মুক্ত হয়, বিল-বাওড়ের পদ্মফুলে পড়লে পদ্মমধু স্বষ্টি করে.আমার নিবে যাওয়া দৃষ্টি-প্রদীপে আলো জেলে দিতে যদি কেউ পারে তো সে ওরাই পারবে । সীতার কথা মনে হয় । আচ্ছা, এই রাত্রে এতক্ষণ সে কি করছে ? যে জীবনের মধ্যে সে আছে, সে জীবনের জন্তে সে তৈরী হয় নি । হয়ত রান্নাঘরে বসে এতক্ষণে এইরকম রাধচে, ও অত বই পড়তে ভালবাসে, তাদের ঘরে একখানা ও বই নেই, বই পড়া হয়ত সেখানে ঘোর অপরাধ—যেমন ছিল জ্যাঠাইমার কাছে । জীবনের যে-কোনো আনন্দভরা অভিজ্ঞতার সময়েই সীতার ব্যর্থ জীবনের কথা আমার মনে না এসে পারে না । সবাই মিলে খেতে বসলাম। রান্না হ’ল বড়ির ঝোল, আলুভাতে, পটলভাজা । কাপাসীর মা অবিপ্তি দেখিয়ে দিল। কাল ঠিক এই সময়ে খাগড়াঘাটের পথে বটতলার চৌধুরী-ঠাকুর ভজন গাইচে । কি খারাপ লোকটা ! টাকার দরকার ছিল, আমায় বললে তো আমি দিতামই। চুরি করে কি হ’ল ! জুড়ন বৈরাগী খাওয়া-দাওয়ার পরে গল্প করতে লাগল। বললে—শুমুন দাদাঠাকুর, এই যে কাপাগীর মা দেখচেন, এর বাবা অনেক টাকা জমিয়ে মারা গিয়েছিল। খেতে না, শুধু টাকা জমাতো। মরবার সময় ভাইকে বললে, অমুক জায়গায় মালসায় টাকা পোতা আছে, নিয়ে এসে আমায় দেখা। তা এই পানচালার কোণে ভাঙা উকুনের মধ্যি মালসা পোতা ছিল —কেউ জানতো না। মরবার সময় তাই টাকার মালদা সামনে নিয়ে খোলে। টাকা দেখতি দেথতি মরে গেল। —সে টাকা কে পেলে তার পর ? —তারপর বুড়ে তো মরে গেল। তার ভাই রটালে মালামৃদ্ধ টাকা সেই রাতি