পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/১১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দৃষ্টি-প্রদীপ 〉ewう আকাশের তলে । মালতীকে কত কথা বলবার আছে, ভাবি কিন্তু ওর সঙ্গে আর আমার তেমন নির্জনে দেখা হয় না। আমি দেখি মালতীর আশাতেই আমি সারাদিন বসে থাকি—ও কখন আসবে। ও থাকে সারাদিন নিজের কাজে ব্যস্ত—হয়ত দেখলাম ঘর থেকে ও বার হ’ল, ভাবি আমার কাছে আসছে বুঝি—কিন্তু তা না এসে থালা হাতে কাকে ভাত দিতে গেল। নয়ত আলনাতে কাপড় টাঙাতে ব্যস্ত আছে। হয়ত একবার থাকতে না পেরে ডেকে বলি— ও মালতী— মালতী বললে—আসছি। অামি বসেই আছি, বেলা দুপুর গড়িয়ে গেল । ও এল কই ? 尊 দিনগুলো প্রায়ই এই রকম । তা ছাড়া আমার ওপর ওর কোন বিশেষ পক্ষপাত ব’লে আমার মনে হয় না। প্রথম দিনকতক যে সে রকম ধারণা না হয়েছিল এমন নয় । কিন্তু এখন সে ভূল ভেঙেছে । সকলকে যেমন যত্ন করে, আমাকেও তেমনি করে। একদিন বসে উদ্ধবদাসের একতার মেরামত করছি—মালতী দেখতে পেয়ে উঠোনের ওকোণ থেকে চঞ্চলপদে এসে সামনে দাড়াল। সকৌতুক সুরে বললে—ও ! কাকার সেই একতারাটা ? আপনি সারাচ্ছেন নাকি ? কি জানেন আপনি একতার সারানোর ? আমি অপ্রতিভ না হয়ে বললাম—জানাজানির কি আছে এতে ? খানিকট তার হাতে এসেছিল—তাই পরিয়ে দিচ্ছি। কথা শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে হাসিমুখে চোখ তুলে চাইতেই ওর সঙ্গে চোথাচোথি হ’ল । সেই মুহূৰ্ত্তে হঠাৎ আমার মনে হ’ল মালতীকে এখানে এক নিঃসহায়, নিৰ্ব্বান্ধব, রিক্ত অবস্থায় ফেলে আমি কোথাও যেতে পারব না । ওর এখানে কে আছে ? একপাল অনাত্মীয়, অশিক্ষিত গেয়ে বৈষ্ণবের মেলার মধ্যে ওকে ফেলে রেখে যাব কি ক’রে ? তার ওর কেউ নয়। তারা ওকে বুঝবে না। তার চেয়ে আমার মনের দেশে ও আমার অনেক আপন, আমার নিকটতম প্রতিবেশী । ভাবলাম মালতীকে সব কথা বলি । বলি, মালতী, সংসারে তোমারও কেউ নেই, আমারও কেউ নেই। তুমি সাধু বাপের সতী মেয়ে, তোমার সংসার-বিরাগী আপন-ভোলা বাপের আশীৰ্ব্বাদ ওই শু্যামসুন্দর তমালতরু ছায়ার মত তোমাকে ঘিরে রেখেছে জানি, কিন্তু আমিও যে সন্ধানে বেরিয়েছি, সে-সন্ধান সফল হবে না তুমি যদি পাশে এসে না দাড়াও । কিন্তু তার বদলে বললাম—ভাল কথা মালতী, তোমাকে অনেকদিন থেকে বলব ভাবচি । উদ্ধব বাবাজীকে বলে আমার এখানে একটা পাঠশালা করার ব্যবস্থা ক'রে দিতে পার । আমার কিছু হয় তা থেকে । মালতী এসে দাওয়ায় পা ঝুলিয়ে বসল। ওর মুখের পাশটা দেখা যাচ্চে, একটা মুকুমার লাবণ্য যেন ওর মুখের চারিপাশ ঘিরে আছে—এক ধরনের সুন্দর মুখ আছে, মনে হয় যেন তাদের মুখের চারিপাশে একটা অদৃশ্ব সৌন্দৰ্য্যজালের বেষ্টনী রয়েছে, যখন কথা না বলে চুপ ক’রে থাকে, তখন তাদের মুখের এই ভাবট মুস্পষ্ট হয়ে ফুটে ওঠে—মালতীর মুখ সেই ধরনের। আমার কথায় ওর মুখচোখ চিন্তাকুল হয়ে উঠল, যেন কি একটা বিষম সমস্ত তার ঘাড়ে আমি চাপিয়ে দিয়েছি। বললে—কিন্তু এখানে যা ভেবে করবেন, তার কিছু হবে না। এখানে মাইনে দেবে না কেউ। এখানে ভদ্রলোক নেই। দ্বারবাসিনীতে কামারেরা আছে, ওদের কলকাতার গাড়ির কারখানা, সেইখানেই থাকে। সরকারেরা তিন বছর পরে এসেছিল পূজোর সময় দেশে —তারপর হেসে ছেলেমানুষের মত ঘাড় জ্বলিয়ে বললে—খান নিয়ে ছেলে পড়াতে