পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/১২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Nebo বিভূতি-রচনাবলী প্রেমিক-প্রেমিকা হঠাৎ অন্তমনস্ক হয়ে পড়ে তাদের চোখে আকারণে জল এসে পড়ে...অবাক হয়ে তারা পরস্পরের মুখের দিকে চেয়ে থাকে। হঠাৎ আমার সামনে অস্পষ্ট অন্ধকারে একজন তরুণ যুবক হাসিমুখে এসে দাড়িয়ে বললে —এস আমার সঙ্গে-- তার গেরুয়া উত্তরীয় আমার গায়ে এসে পড়ছে উড়ে। আমি বলি—কোথায় যাব ? কে আপনি ? নবীন বৈষ্ণব বললে—আমি জীবগোস্বামী—আমারই পদাবলী তুমি সনোবেল শুনেচ যে। এত শীগগির ভুলে যাও কেন হে ছোকরা ? এস আমি বৃন্দাবনে যাব। শ্ৰীকৃষ্ণকে আমার পাওয়৷ চাই । . —আপনি ড়ো মারা গিয়েছেন আজ তিন-শো বছরের ওপর । আপনি আবার কোথায় ? —পাগল ! কে বললে আমি মরেছি। আর মলেই কি আমার যাওয়া ফুরিয়েছে নাকি ? এসো এসো—আমি সংসার ছেড়েছি, সব ছেড়েছি, তার জন্তে । দেখছ না পাগল হয়ে পথে পথে বেড়াচ্ছি ? * এমন ভাবে কথাগুলো সে বললে আমি যেন শিউরে উঠলুম। বললাম—তা তো দেখতে পাচ্ছি, পাগলের আর বাকী কি ? আপনি যান, আমি যীশুখৃষ্টের ভক্ত, আমি বৃন্দাবনে যাব না । তাছাড়া মালতীকে ফেলে এক পা-ও এখান থেকে নড়ছি নে আমি । তরুণ বাউল হেসে একতারা বাজাতে বাজাতে চলে গেল—পথের মাঝে নাচতে নাচতে গাইতে গাইতে যেতে যেতে দূরের অন্ধকারে মিলিয়ে গেল”অন্ধকারের মধ্যে থেকে তার গলার মিষ্টি সুর তখনও যেন ভেসে আসছে--- মধু রিপুরূপমুদ্রারম্ মধু রিপুরূপমুদ্রারম্ সুখদং মুখদং ভবসারম্ হঠাৎ আমার ঘুম ভেঙে গেল। গাছের গুড়িতে হেলান দিয়ে শেষ রাতের ঠাণ্ডায় কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলুম কে জানে—শিশিরে কাপড়-চোপড় ভিজে গিয়েছে। ফরসা হবার আরদেরি নেই । H > R || দেখতে দেখতে এখানে ছ-সাত মাস হয়ে গেল। এখানে সময় কাটে কোথা দিয়ে বুঝতে পারি নে। সকালে আখড়ার কাজ করি, বিকেলে গোটকতক ছেলে নিয়ে একটা পাঠশালা করি, তাতে যা পাই উদ্ধব বাবাজীর হাতে তুলে দিই। একদিন মালতী আমার বললে—ছেলে পড়িয়ে যা পান, তা আপনি উদ্ধব-জ্যাঠার হাতে দেন কেন ? থাকা-খাওয়ার দরুন টাকা নেওয়া তো এখানে নিয়ম নেই, ও-টাকা আপনি নিজে রেখে দেবেন, আপনারও তো নিজের টাকার দরকার আছে । আমি বললাম--ত কি ক’রে হয় মালতী, আমি এমনি খেতে পারি নে। আর আমি তো খাওয়া থাকা ব’লে টাকা দিই নে, বিগ্রহের সেবার জন্তে দিই। এতে দোষ কি ? সেদিন মালতী আর কিছু বললে না । দিন-চারেক পরে আবার এক দিন ওই কথাই তুললে। টাকা আমি কেন দিই ? আখড়া তো হোটেলখানা নয় যে এখানে টাকা দিয়ে খেতে হবে ? ওতে তার মনে বাধে। তা ছাড়া আমার তো টাকার দরকার আছে। আমি তাকে