পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/১২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

〉》め বিভূতি রচনাবলী —সাজু, আমি আর কখনও ও-রকম করব না। আপনি বলুন ওদের, কেমন তো ? যাত্র হয়ে গেল—মালতী ওদের ছানা খাওয়ালে পেট ভরে । বললে—বাবা রাস্তা থেকে লোক ডেকে এনে খাওয়াতেন আর আমরা মুখ ফুটে যারা খেতে চাইছে, তাদের খাওয়াব না ? দলে ছোট ছোট ছেলেরা আছে, রাগ জেগে চেচিয়ে শুধু মুখে ফিরে যাবে, এ কখনও হয় ? মালতী অনেক বৈষ্ণব-গ্ৰন্থ পড়েছে। সময় পেলেই বিকেলে আমার কাছে বই নিয়ে আসে, দু'জনে পুকুরপাড়ে গাছের ছায়ায় গিয়ে বসি । আমার হয়েছে কি, সব সময় ওকে পেতে ইচ্ছে করে, নানা কথাবাৰ্ত্তায় ছল-ছুতোয় ওকে বেশীক্ষণ কাছে রাখতে ইচ্ছে করে। কিন্তু বিকেলের দিকে ছাড়া সারাদিন ওর দেখা পাওয়া ভার। ওর কাছে বুদ্ধের কথা বলি, সেন্ট, ফ্রান্সিসের কথা বলি। ও আমাকে শ্রীচৈতন্তের কথা, শ্ৰীকৃষ্ণের কথা শোনায় । এক দিন হঠাৎ আবিষ্কার করা গেল মালতী বই লেখে। কি কাজে পুকুরের ঘাটে গিয়েছি দুপুরের পরে, দেখি বাধানে সিড়ির ওপর জামগাছের ছায়ায় একখানা খাতা পড়ে আছে— পাশেই দোয়াত কলম—খাতাখানা উন্টে দেখি মালতীর হাতের লেখা। এখানে বসে লিখতে লিখতে হঠাৎ উঠে গিয়েছে। অত্যন্ত কৌতুহল হ’ল—না দেখে পারলাম না, প্রথমেই ওর গোটা গোট মুক্তার ছাদে একটা সংস্কৃত শ্লোক লেখা :– অনর্পিতচরীং চিরাৎ করুণয়াবতীর্ণঃ কলেী 萧 崇 舉 সদা হৃদয়কন্দরে স্কুরতুবী শচীননান; তার পরে রাধাকৃষ্ণের লীলা-বর্ণনা, বৃন্দাবনের প্রকৃতি বর্ণনা মাঝে মাঝে । খাতার ওপরে লেখা আছে—“পাষগুদলন-গ্রন্থের অনুকরণে লিখিত।” দেখছি এমন সময় মালতী কোথা থেকে ফিরে এসে আমার হাতে খাতা দেখে মহাব্যস্ত হয়ে বললে—ও কি ? ও দেখছেন কেন ? দিন আমার খাতা— আমি অপ্রতিভ হয়ে বললাম—এইখানে পড়ে ছিল, তাই দেখছিলাম কার খাতা— —ন, দিন—ও দেখবার জো নেই। —যখন দেখে ফেলেছি তখন তার চারা নেই। কে জানতো তুমি কবি ! এ শ্লোকটা কিসের ? মালতী সলজ্জ মুরে বললে—চৈতন্যচরিতামৃতের । কেন দেখছেন, দিন— —শোনো মালতী—লিখেছ এ বেশ ভাল কথাই । কিন্তু তোমার এ লেখা সেকেলে ধরনের। পাষণ্ডদলনের অমুকরণে বই লিখলে একালে কে পড়বে ? তুমি আজকালকার কবিতার বই কিছু পড় নি বোধ হয় ? মালতী আগ্রহের মুরে বললে—কোথায় পাওয়া যায়, আমায় দেবেন আনিয়ে ! আমি তো জানি নে আজকালকার কবিতার কি বই আছে—আনিয়ে দেবেন। আমি দাম দেবো । দাম দেওয়ার কথা বলাতে আমার মনে ঘা লাগল। মালতী কাছে থেকেও যেন দূরে। বড় অদ্ভুত ধরনের মেয়ে, ও একালেরও নয়, সেকালেরও নয়। এই পাড়াগায়ে মানুষ হয়েছে, যেখানে কোন আধুনিকতার ঢেউ এসে পৌছয় নি, কিন্তু বুদ্ধিমতী এমন যে আধুনিকতাকে বুঝতে ওর দেরি হয় না। এমন মুন্ধর চা করে, শ্রীরামপুরের শৈলদিরা অমন চা করতে পারত না। নিজে মাছমাংস খায় না কিন্তু আমার জন্তে এক দিন মাংস রাধলে রান্নাঘরের উকুনেষ্ট । আমার প্রায়ই বলে—আপনার যখন যা খেতে ইচ্ছে হবে বলবেন। আপনি তো জার বৈষ্ণব হন মি যে মাছমাংস খাবেন না! আমার বলবেন, আমি রোধে দেব এখন।