পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/১২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

X58 বিভূতি-রচনাবলী ছুটােছুটি করতে পারে বটে, কিন্তু ওর গারে তেমন শক্তি নেই। নীরদার সাহায্য না পেলে সেদিন শুধু মালতীকে দিয়ে মড়া নামানো সম্ভব হ’ত বলে মনে হয় না। শেষ পর্য্যস্ত গায়ের লোক এল এবং তারাই মৃতদেহ শ্মশানে নিয়ে গেল। আমিও সঙ্গে গেলুম, মেয়েদের যেতে হ’ল না, মালতী রইল নীরদার কাছে । নীরদ আমায় বললে—দাদা, শ্রীদ্ধের সময় কিন্তু আপনাকে সব ভার নিতে হবে । আর কারও হাতে দিয়ে আমার বিশ্বাস হবে না। রুপি তো আছেই, আপনাকে অন্য কিছু খাটাবো না, ভাড়ারের ভার আপনাকে হাতে নিতে হবে, নইলে এ-সব পাড়াগায়ের ব্যাপার আপনি জানেন না । - বেশ ঘটা ক’রেই শ্ৰাদ্ধ হ’ল। মালতী বুক দিয়ে পড়ে কি খাটুনিটাই খাটলে । মালতী, তুমি আমার চোখ খুলে দিলে । ঘুম নেই, নাওয়া নেই, খাওয়া নেই, বসা নেই—কিসে কাজ সর্বাঙ্গসুন্দর হবে, কেউ নিন্দে করবে না ওদের, কোন জিনিস অপচয় না হয় ওদের, সে-ই একমাত্র লক্ষ্য। পরের কাজে এমনি ক’রে নিজেকে ঢেলে দিতে তুমি পার তোমার বাবার রক্ত তোমার গায়ে বইছে বলে । নীরদাকেও চিনলুম সেদিন। রাত দশটা। রান্নাঘরের দরজার কাছে শূন্ত ডালের গামল, লুচির ধাম, ডালনার বালতির মধ্যে নীরদ দাড়িয়ে আছে। সারাদিন কি খাটুনিই খেটেছে সে । চর্কির পাক ঘুরেছে মালতীর সঙ্গে সমানে সেই সকাল থেকে—এর মধ্যে আবার পীড়িত মায়ের দেখাশুনা করেছে ওপরে গিয়ে। ঘামে ও শ্রমে মুখ রাঙ, ( নীরদার রং বেশ ফসর্ণ) চুল আলুথালু হয়ে মুখের পাশে কপালে পড়েছে । আমি বাইরের ক-জন লোককে খাওয়াব বলে কি আছে না-আছে দেখতে রান্নাঘরে ঢুকেছি। নীরদ বললে—দাদ, কিছু নেই আর ; ক-জন লোক ? আচ্ছা দাড়ান, ময়দা মাখছি, দিচ্ছি ভেজে । আমি বললুম—আর তুমি আগুনের তাতে যেও না নীরদ । তোমার চেহারা যা হয়েছে ! আচ্ছা দাড়াও—মালতীকে বলি একটু মিছরির শরবৎ তোমায় বরং দিতে— নীরদ বললে—দাড়ান, দাড়ান দাদা। রুণি কতবার খাওয়াতে এসেছিল—সে কি চুপ ক’রে থাকবার মেয়ে ? তারপর হেসে বললে—আজি যে একাদশী, দাদা । আমার চোখে জল এল। আর কিছু বললাম না । মেয়েমানুষের মত সহ করতে পারে কোন জাত ? অনেক শিখলাম এদের কাছে এই ক-মাসে । মাকে দেখেছি, বৌদিদিকে দেখেছি, সীতাকে দেখেছি, শৈলদিকে দেখেছি, এদেরও দেখলাম। অথচ এই নীরদাকে ভেবেছিলুম অশিক্ষিত গ্রাম্য মেয়ে, ওর কথাবার্তায় রাঢ় দেশের টান বড় বেশী বলে । মালতী আখড়ায় ফিরে এসে আমায় বললে—অনেকগুলো সন্দেশ এনেছি, খান—নীরদীদিদি জোর ক’রে দিলে। ভাল সন্দেশ, দ্বারবাসিনীতে এরকম করতে পারে না, সিউড়ি থেকে আনানো। তার পর কেমন এক ধরনের ভঙ্গি ক’রে হাসতে হাসতে বললে—বমুন, ঠাই ক’রে দিই আপনাকে । ও-বেলার লুচি আছে, দই আছে—নীরদাদিদি একরাশ খাবার দিয়েছে ستهc&ct ওকে এত ছেলেমাহুৰ মনে হয় এই-সব সময়ে ।