পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/১২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দৃষ্টি-প্রদীপ › »ማ আমার দেখা উচিত ব'লেই আপনাকে জানাচ্ছি এ-কথা। রুণি-মা সেরকম মেয়ে নয়। আমি সেটা খুবই জানি, কিন্তু লোকে তো—রাগ করবেন না, ভেবে দেখুন। লোকে যদি ওর নামে পাচটা কথা ওঠায় বা বলে—সেটা আমার উচিত হতে না দেওয়া—নয় কি ? আমি বললাম—সেটা আমার অন্যায় হয়েছে স্বীকার করি । কিন্তু আমি ওকে বিয়ে করতে চাই ; আপনি তো বলেছিলেন, মালতীর যদি ইচ্ছা হয়—ওর বাবার ওর ওপর আদেশ আছে— —কিন্তু ওর বাবা কষ্ঠীধারী বৈষ্ণব ছিলেন—আপনি ব্রাহ্মণ বটে, বৈষ্ণব নন, তার ওপর আপনি খৃষ্টানী মতের লোক, আপনার সঙ্গে কি ক'রে ওর বিয়ে হতে পারে ? ' ও বৈষ্ণবের মেয়ে, বৈষ্ণবের সঙ্গেই ওর বিয়ে হবে। তবে মালতীর এতে কি ইচ্ছে জাহ্ন, সে যদি বলে, আমার আপত্তি নেই। ওর বাবা ওরই ওপর সে ভার দিয়েছিলেন । সেদিনই সন্ধ্যার সময় ওকে নির্জনে পেলাম। ওকে বললাম—একটা কথা বলব মালতী ? তুমি অভয় দেবে ? মালতী কৌতুকের স্বরে বললে—উ মাগো—যাত্রার দলের মত কথা শুনে আর বাচি নে । কি বলবেন বলুন না ? 楊 —তুমি কি চিরকাল এই ভাবে জীবন কাটাবে? না, হাসিখুশী না—দরকারী কথা । সবতাতেই হাস কেন—ভেবে দেখ আমি কি বলছি— —কেন এ জায়গা কি খারাপ ? এমন চমৎকার মাঠ, দীঘি—আপনি সেদিন কি কবিতাটা বলছিলেন— মালতী কথা শেষ না ক’রেই ছেলেমামুখি হাসি শুরু করলে । আমি বললাম—না মালতী, লক্ষ্মীটি ওভাবে কথা উড়িয়ে দিও না । আমি তোমায় চাই । তোমায় বিয়ে ক’রে এখান থেকে নিয়ে যেতে চাই। কি বল তুমি ? মালতীর মুখের হাসি হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেল—সে কেমন বিস্ময়বিহ্বল-দৃষ্টিতে আমার দিকে চাইলে—তার পরেই তার মুখেচোথে ঘনিয়ে এল লজ্জা । ওর এ ধরনের লজ্জা আমি কখনও দেখি নি । বেশ খানিকক্ষণ কেটে গেল। মালতীর মুখে উত্তর নেই। বললাম—ভেবে উত্তর দিও। এখুনি চাইনে তোমার উত্তর । তাড়াতাড়ি কিছু না বলাই ভাল । মালতী এতক্ষণ মুখ নীচু করে ছিল—এইবার মুখ তুলে কিন্তু অন্যদিকে চেয়ে বললে— কিন্তু এ জায়গা ছেড়ে যেতে হবে কেন ? —ছেড়ে যেতে হবে এই জন্তে মালতী যে, আমি তো তোমাকে এখানে আখড়ায় থাকতে দিতে পারব না। আমিও এখানে চিরদিন কাটাতে পারি নে। মালতীর মুখের ভাবে আমার মনে হ’ল আমার মুখে এ-কথা যেন ওর পক্ষে অপ্রত্যাশিত। ও কি ভেবেছে আমিও চিরকাল এই আখড়াতেই থেকে যাব ? ওর মুখ দেখে মনে হ’ল আমার এ কথায় ও মনে বেদনা পেয়েছে। আমি কথাটা যতদূর সম্ভব নরম করতে পারা যায় ক'রে বললাম—তুমি এখনও ছেলেমানুষ । নিজের সম্বন্ধে বিচার ক’রে দেখতে পাবার ক্ষমতা এখনও হয় নি। তুমি একা এখানে কি করবে বল ? উদ্ধব-বাবাজীও চিরকাল থাকবেন না। এই মাঠের মধ্যে আখড়ায় চিরজীবন কাটাবে একা একা-? মালতী মুখ নীচু ক’রেই আস্তে আস্তে নরম মুরে বললে—বাবা মরণকালে এর ভার সঁপে দিয়েছিলেন উদ্ভব জ্যাঠার ওপর নয়, আমারই ওপর। বাবার বিষ্ণুমন্দির আমার শেষ করে