পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/১৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ծՀ8 বিভূতি-রচনাবলী উপবাস করে আছে, আরতির পরে দুধ ও ফল খাবে। সেই নিঃসঙ্কোচে পুকুরের ঘাটে বসে বসে আমাকে গান-শোনানো, আমার সঙ্গে শিবের মন্দিরে যাওয়—খাতা পড়ে শোনানে— সকলের ওপরে তার হাসি, তরে মুখের সে অপূৰ্ব্ব হাসি! কত কথাই মনে এসে নির্জনে যাপিত প্রতি প্রহরটি আনন্দবেদনায় অলস ক’রে দিত । দূরের গিরি-লাম্বর গায়ে ক্রীড়ারত শুভ্ৰ মেঘরাজির মধ্যে এমন কি কোন দয়ালু মেঘ নেই যে এই কুটজ কুসুমাস্তীর্ণ নিভূত অধিত্যকার ওপর দিয়ে যেতে যেতে পিয়ালতলার এই নির্বাসিত যক্ষের বিরহুবাৰ্ত্তাটি শুনে জেনে নিয়ে বাংলা দেশের প্রান্তরমধ্যবৰ্ত্তী অলকাপুরীতে পৌছে দেয় তার কানে ? কতবার মনে অনুশোচনা হয়েছে এই ভেবে যে কেন চলে আসতে গিয়েছিলুম অমন চুপি চুপি ? তখন কি বুঝেছিলুম মালতী আমায় এত ভাবাবে ] কি বুঝে আখড়া ছেড়ে এলাম পাগলের মত । এমনধারা খামখেয়ালী স্বভাব আমার কেন যে চিরকাল, তাই ভাবি । আমার মাথার ঠিক নেই সবাই বলে, সত্যিই বলে। এখন বুঝেছি কি ভুলই করেছি মালতীকে ছেড়ে এসে ! ওকে বাদ দিয়ে জীবন কল্পনা করতে পারছি নে—এও যেমন ঠিক, আবার এও তেমনি ঠিক যে আর সেখানে আমার ফেরা হবে না। ন—মালতী, আর ফিরে যাব না। কাছে পেয়ে তুমি যদি অনাদর কর সইতে পারব না। তোমার খামখেয়ালী স্বভাবকে আমার ভয় হয় । তার চেয়ে এই-ই ভাল। আমার জীবনে তুমি পুকুরের ঘাটের কত জ্যোৎস্নারাত্রি অক্ষয় ক’রে দিয়েছ, সেই সব জ্যোৎস্নারাত্রির স্মৃতি, তোমার বাবার বিষ্ণুমন্দিরে কত সন্ধ্যায় প্রদীপ দেওয়ার স্মৃতি—তোমার সে সব আদরের স্থতি মৃত্যুঞ্জয়ী হয়ে থাক । ü Ꮌ8 i! এক বছর কেটে গেল, আবার শ্রাবণ মাস । হঠাৎ দাদার শালার একখানা চিঠি পেলাম কলকাতা থেকে। দাদার বড় অমুখ, চিকিৎসার জন্তে তাকে আনা হয়েছে ক্যাম্বেল হাসপাতালে। পত্র পেয়ে প্রাণ উড়ে গেল। সাধুজীর কাছে বিদায় নিয়ে কলকাতায় এলাম। হাসপাতালে দাদার সঙ্গে দেখা করলাম। সামান্ত ব্ৰণ থেকে দাদার মুখে হয়েছে ইরিসিপ্লাস, আজ সকালে অস্ত্রও করা হয়ে গিয়েছে। দাদা আমার দেখে শরীরে যেন নতুন বল পেল। সন্ধ্যা পৰ্য্যন্ত হাসপাতালে বসে রইলাম দাদার কাছে। দাদা বললে—এখানে বেশ খেতে দেয় জিতু। রোজ প্রতিবেলায় একখানা বড় পাউরুটি আর আধ সের করে দুধ দিয়ে যায়। দেথিস এখন, এখুনি আনবে। খাবি রুটি একখানা ? পরদিন সকালে আবার গেলাম হাসপাতালে। আঙুর কিনে নিয়ে গিয়েছিলাম বৌবাজারের মোড় থেকে, দাদাকে বসে বসে খাওয়ালাম। দুপুরের আগে চলে আসছি, দোর পর্য্যস্ত এসেছি, স্বাদ পেছু ডাকলে—জিতু, শোন। দাদা বিছানার ওপর উঠে বসেছে—তার চোখ দুটিতে যেন গভীর হতাশা ও বিষাদ, মাখানে। বললে—জিতু, তোর বৌদিদি একেবারে নিপাট ভালমানুষ, সংসারের কিছু বোঝে না। ওকে দেখিল—