পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/১৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

లe বিভূতি-রচনাবলী গুলো খাদ্যকণা খুটে খাচ্ছে যেদিকে, তাদের অসহায় পক্ষ-ভঙ্গিতে কি যেন লেখা আছে— একবার চাই তিসির ফুলের রঙের আকাশের পানে—ঝলমল প্রভাতের স্বৰ্য্যকিরণের পানে, শস্যামল পৃথিবীর পানে—কি রূপ! এই আননের মধ্যে দিয়ে আমার দ্বিজত্ব, এক গৌরবসমৃদ্ধ পবিত্র নবজন্ম । মনে মনে বলি, আপনি আমায় এরকম করে দেবেন না, আমার সংসার করতে দিন ঠাকুর । দাদার ছেলেমেয়ের, বৌদিদি আমার মুখের দিকে চেয়ে থাকে ওদের অল্পের জন্তে, ওদের আমি তো ফেলে দিতে পারব না !" এখন আমায় এরকম নাচাবেন না । বৈকালের দিকে পারে হেঁটে গাংনাপুরের হাটে পৌঁছলাম। তনু চৌধুরী আগে থেকে ঠিক করেছে আমার মাথা খারাপ । রাস্তার মধ্যে নেমে পড়লাম কেন ও-রকম ? ফিরবার পথে সন্ধ্যার রাঙা মেঘের দিকে চেয়ে কেবলই মনে হ’ল ভগবানের পথ ঐ পিঙ্গল ও পাটল বর্ণের মেঘপৰ্ব্বতের ওপারে কোনো অজানা নক্ষত্রপুরীর দিকে নয়, তার পথ আমি যেখান দিয়ে হাটছি, ওই কালু-গাড়োয়ান যে পথ দিয়ে গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে—এ পথেও ! আমার এই পথে আমার সঙ্গে পা ফেলে তিনি চলেছেন এই মুহূৰ্ত্তে—আমি আছি তাই তিনি আছেন। যেখানে আমার অসাফুল্য সেখানে তারও অসাফল্য, আমার যেখানে জয়, সেখানে তারও জয় । আমি যখন মুন্দরের স্বপ্ন দেখি, ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের আদর করি, পরের জন্ত খাটি-তখন বুঝি ভগবানের বিরাট শক্তির সপক্ষে আমি দাড়িয়েছি—বিপক্ষে নয়। এই নীল আকাশ, অগ্নিকেতন উল্কাপুঞ্জ, বিদ্যুৎ আমার সাহায্য করবে। বিশ্ব যেন সব সময় প্রাণপণে চেষ্টা করছে শিব ও মুন্দরের মধ্যে নিজের সার্থকতাকে খুঁজতে, কিন্তু পদে পদে সে বাধা পাচ্ছে কি ভীষণ । বিশ্বের দেবতা তবুও হাল ছাড়েন নি—তিনি অনন্ত ধৈর্যে পথ চেয়ে আছেন। নীরব সেবাব্রত স্বৰ্য্য ও চন্দ্র আশায় আশায় আছে, সমগ্র অদৃশ্যলোক চেয়ে আছে—আমিও ওদের পক্ষে থাকব । বিশ্বের দেবতার মনে দুঃখ দিতে পারব না। জীবনে মানুষ ততক্ষণ ঠিক শেখে না অনেক জিনিসই, যতক্ষণ সে দুঃখের সম্মুখীন না হয়। আগে স্রোতের শেওলার মত ভেসে ভেসে কত বেড়িয়েছি জীবন-নদীর ঘাটে ঘাটে—তটগ্রাস্তবত্তী যে মহীরুহটি শত স্মৃতিতে তিলে তিলে বন্ধিত হয়ে স্নানার্থিনীদের ছায়াশীতল আশ্রয় দান করেছে—সে হয়ত বৈচিত্র্য চায় নি তার জীবনে—কিন্তু একটি পরিপূর্ণ শতাব্দীর স্বৰ্য্য তার মাথায় কিরণ বর্ষণ করেছে, তার শাখাপ্রশাখায় ঋতুতে ঋতুতে বনবিহঙ্গদের কৌতুক বিলাস কলকাকলী নিজের আশ্রয় খুঁজে পেয়েছে —তার মৃদু ও ধীর, পরার্থমুখী গভীর জীবন-ধারা নীল আকাশের অদৃশু আশীৰ্ব্বাদতলে এই একটি শতাব্দী ধরে বয়ে এসেছে—বৈচিত্র্য যেখানে হয়ত আসে নি—গভীরতায় সেখানে করেছে বৈচিত্র্যের ক্ষতিপূর্ণ। প্রতিদিনের স্বৰ্য্য শুকতারার আলোকোজ্জল রাজপথে রঙ ধূলি উড়িয়ে রজনীর অন্ধকারে অদৃশু হন—প্রতিদিনই সেই সন্ধ্যায় আমার মনে কেমন এক প্রকার আনন্দ আসে—দেখি যে পুকুরের ধারে বর্ষার ব্যাঙের ছাতা সুৰ্য্যের অমৃত কিরণে বড় হয়ে পুষ্ট হয়ে উঠেছে—দেখি উইয়ের ঢিবিতে নতুন পাখা ওঠা উইয়ের দল অজানা বায়ুলোক ভেদ ক’রে হয়েছে মরণের যাত্রী, শরতের কাশবন জীবন-স্বষ্টির বীজ দূরে দূরে, দিকে দিগন্তে ছড়িয়ে দিয়ে রিক্ততার মধ্যেই পরম কাম্য সার্থকতাকে লাভ করেছে—দারিদ্র্য বা কষ্ট তুচ্ছ, পৃথিবীর সমস্ত বিলাস-লালসাও তুচ্ছ, আমি কিছুই গ্রাহ করি নে যদি এই জাগ্রত চেতনাকে কখনও না হারাই —যদি হে বিশ্বদেবত, বাল্যে তুষারাবৃত কাঞ্চনজঙ্ঘাকে যেমন সকালবেলাকার স্বর্ষ্যের আলোয় সোনার রঙে রঞ্জিত হতে দেখতুম—তেমনি যদি আপনি আপনার ভালবাসার রঙে আমার প্রাণ রাঙিয়ে তোলেন—আমিও আপনাকে ভালবাসি যদি—তবে সকল সংকীর্ণতাকে, দুঃখকে