পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/১৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

రిy বিভূতি-রচনাবলী —এতদিন কোথায় ছিলেন ? —নানা দেশে । তারপর দাদা মারা গেলেন, আমার ওপরে ওদের সংসারের ভার। —উঃ, কি নিষ্ঠুর আপনি ! তার পর সে বললে—আপনি বসুন, খুকীর সম্বন্ধে একটা ব্যবস্থা তো করতে হবে। একবার নীরদ-দিদিকে ডাকি । আমি বললাম—আমি কিন্তু এখনই যাব মালতী। ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের ফেলে রেখে এসেছি পরের বাড়িতে। আমাকে যেতেই হবে । মালতী আশ্চৰ্য্য হয়ে বললে—আজই ? আমি বললাম—আমার কাজ আমি শেষ করেছি, এখন তুমি যা করবে কর খুকীকে নিয়ে । আমি থেকে কি করব ? আমি যাই । মালতী স্থিরদৃষ্টিতে আমার দিকে চেয়ে বলল—আমায় নিয়ে যান তবে । আমি অবাক হয়ে বললাম—সে কি মালতী ? তুমি যাবে আমার সঙ্গে ? তোমার এই আখড়া ? মালতীর সঙ্গে যেদিন ছাড়াছাড়ি হয়েছিল, সেদিনটি যেমন ও চোখ নামিয়ে কথা বলেছিল —ঠক তেমনই ভঙ্গিতে চোখ মাটির দিকে রেখে স্পষ্ট ও দৃঢ় মুরে বললে—আপনি আমায় নিয়ে চলুন সঙ্গে যেখানে আপনি যাবেন । এবার আপনাকে একলা যেতে দেব না । একচল্লিশ দিনে জর ছেড়ে গেল । সেরে উঠলে বৌদিদি একদিন বললেন–জরের ঘোরে ‘মালতী’ ‘মালতী’ বলে ডাকতে কাকে, মালতী কে ঠাকুরপো ? আমি বললাম—ও একটি মেয়ে । বাদ দাও ও-কথা। রোজ বলতাম ? কত দিন বলেছি ? এই অমুখ-বিমুখে মাসীমার দেওয়৷ সেই একশো টাকা তে গেলই, বৌদির গায়ের সামান্ত য। দু-একথান। গহন ছিল তা-ও গেল। নতুন চাকুরিটাও সঙ্গে সঙ্গে গেল । এখান থেকে তিন ক্রোশ দূরে কামালপুর বলে একট। গ্রাম আছে। নিতান্ত পাড়াগ এবং জঙ্গলে ভরা। সেখানকার দু-একজন জানাশোনা ভদ্রলোকের পরামর্শে সেখানে একটা পাঠশালা খুললাম। বৌদিদিদের আপাতত: কালীগঞ্জে রেখে আমি চলে গেলাম কামালপুরে। একটা বাড়ির বাইরের ঘরে বাসা নিলাম—বাড়ির মালিক চাকুরির স্থানে থাকেন, বাড়িটাতে অনেকদিন কেউ ছিল না। বাড়ির পিছনে একটা আম-কঁঠালের বাগান । পাঠশালায় অনেক ছেলে জুটল—কতকগুলি ছোট মেয়েও এল । যা আয় হয়, সংসার একরকমে চলে যায় । + সময় বড় মনের দাগ মুছে দেবার মন্ত্র জানে। আবার নতুন মন, নতুন উৎসাহ পেলাম । সঙ্গে সঙ্গে জীবনের একটা নতুন অধ্যায় কি রকমে শুরু হ’ল তাই এখানে বলব। পাঠশালা খুলবার পরে প্রায় দু-বছর কেটে গিয়েছে। ভাদ্র মাস। বেশ শরতের রোদ ফুটেছে। বর্ষার মেঘ আকাশে আর দেখা যায় না। একদিন আমি পাঠশালায় গিয়েছি, একটা ছোট মেয়ে বলছে—মাস্টার মশায়, পেনো হিরণদিদির হাত আঁচড়ে কামড়ে দিয়েছে, ওই দেখুন ওর হাতে রক্ত পড়ছে। যে মেয়েটির হাত আঁচড়ে দিয়েছে তার নাম হিরন্ময়ী, বয়স হবে বছর চোঁদ, পাঠশালার কাছেই ওদের বাড়ি–কিন্তু মেয়েটি আমার পাঠশালায় ভৰ্ত্তি হয়েছে বেশী দিন নয় । ওর বাবার নাম কালীনাথ গাজুলী, তিনি কোথাকার আবাদের নায়েব, সেইখানেই থাকেন, বাড়িতে