পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/১৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দৃষ্টি-প্রদীপ >82 হিরণয়ীকে বললাম—শোন হিরণ, আমার এখানে সন্ধ্যাবেলা আর এস না, যখন তোমার . মা বকেন। মার কথাটা অন্ততঃ তোমার মানা উচিত। বুঝলে ? পরদিন হিরন্ময়ী সত্যিই আর এল না। আমার সন্ধ্যাটা কেমন যেন ফাকা হয়ে গিয়েছে ওর না আসাতে, সেদিন প্রথম লক্ষ্য করলাম। সাত-আট দিন কেটে গেল—হিরন্ময়ী পাঠশালাতে রোজই আসে। তাকে জিজ্ঞাসা করি না অবিশুি কেন সে সন্ধ্যাবেল আসে না। একদিন সে পাঠশালাতেও এল না। দু-তিন দিন পরে জিজ্ঞেস ক’রে জানলাম সে মামার বাড়ি গিয়েছে তার মায়ের সঙ্গে । দেখে আশ্চৰ্য্য হলাম যে আমার পাঠশালা আর সে পাঠশালা নেই—আমার সন্ধ্যাও আর কাটে না । হিরণের বিয়ের সম্বন্ধ হচ্ছে ওর মামার বাড়ি থেকে, মেয়ে দেখাতে নিয়ে গিয়েছে —বরপক্ষ ওখানে মেয়েকে আশীৰ্ব্বাদ করবে। মানুষের মন কি অদ্ভুত ধরনের বিচিত্র। হঠাৎ কথাটা শুনেই মনে হ’ল ও গায়ের পাঠশালা উঠিয়ে দেব, অন্যত্র চেষ্টা দেখতে হবে । কেন, যখন প্রথম পাঠশালা খুলেছিলাম এ গায়ে, তখন তো হিরণের অপেক্ষায় এখানে আসি নি, তবে সে থাকলো বা গেল—আমার তাতে কি আসে যায় ? 尊 মাসখানেক কেটে গিয়েছে। আমি কলের মত কাজ করে যাই, একদিন সামান্ত একটু বাদলা মত হয়েছে—পাঠশালার ছুটি দিয়ে সকাল-সকাল রান্না সেরে নেব বলে রান্নাঘরে ঢুকেছি, বেলা তখনও আছে। এমন সময় দোরের কাছে দেথি হিরন্ময়ী এসে হাসি-হাসি মুখে দাড়িয়েছে। আমি বিস্ময়মিশ্রিত খুশীর মুরে বলে উঠলাম—এস, এস হিরণ—কখন এলে তুমি ? বসে । হিরন্ময়ী বললে—কেমন আছেন আপনি ? তার পর সে এগিয়ে এসে সলজ্জ আড়ষ্টতার সঙ্গে বপ, ক’রে আমার পায়ের ধুলো নিয়ে প্রণাম করে আবার সোজা হয়ে দোরের কাছে দাড়ালে । আমি এত খুশী হয়েছি তখন, ওকে কি বলবো ভেবে পাইনে যেন। বললাম—বসে হিরণ, দাড়িয়ে কেন ? হিরন্ময়ী বোধ হয় একটু সঙ্কোচের সঙ্গেই এসেছিল, আমি ওর আসাটা কি চোখে দেখি— এ নিয়ে । আমার কথা শুনে—হাজার হোক নিতান্ত ছেলেমানুষ তেী—ও যেন ভরসা পেল । ঘরের মধ্যে ঢুকে একটা পিড়ি পেতে বসল। আমার মুখের দিয়ে চেয়ে বললে—কি সেই শিখিয়ে দিলেন, ‘নয় পরিত্যাগ-প্রণালী’ না কি ? সব ভুলে গিয়েছি—হি-হি— দেখলাম ওর বিয়ে হয় নি।—ওকে আর কোন কথা বলি নি অবিপ্তি তা নিয়ে । দেনাপাওনার ব্যাপার নিয়ে সে-সম্বন্ধ ভেঙে গিয়েছে—দু-চার দিনে অপরের মুখে শুনলাম। আবার হিরন্ময়ী আমার পাঠশালাতে নিত্য আসে যায়—সন্ধ্যাবেলাতেও রোজ আসে—ঝড় হোক, বৃষ্টি হোক, তার সন্ধ্যায় আসা কামাই যাবে না । কেন তার মা এবার তাকে বকেন না—সে কথা আমি জানি নে—তবে বকেন না যে, এটা আমি জানি । বরং একদিন হিরন্ময়ী বললে—আজ আলো জেলে একটা বই পড়ছি, মা বললে আজ যে তুই তোর মাস্টারের কাছে গেলিনে বড় ? তাই এলুম মাস্টার মশায়। আমি বললাম—তা বেশ তো, গল্পের বই পড়লেই পারতে। মা না বলে দিলে তো আজ আসতে না ? কথাটা বলতে গিয়ে নিজের অলক্ষিতে একটা অভিমানের সুর বার হয়ে গেল—ছিরশ্নীি