পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/১৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

38 R. বিভূতি-রচনাবলী সেটা বুঝতে পেরেছে অমনি। এমন বুদ্ধিমতী মেয়ে এইটুকু বয়সে বললে—নিন, আর রাগ করে না । ভেবে দেখুন, আপনি না আমার এখানে এলে তাড়িয়ে দিতেন আগে আগে ? দুঃখিত ভাবে বললাম—ছি, ও-কথা বলো না হিরণ, তাড়িয়ে আবার তোমার দিয়েছি কবে ? ও-কথাতে আমার মনে কষ্ট দেওয়া হয় । হিরন্ময়ী মুখে কাপড় দিয়ে খিলখিল করে উচ্ছ্বসিত ছেলেমাহুষি হাসির বন্যা এনে দিলে । ঘাড় দুলিয়ে দুলিয়ে বলতে লাগল—না—না দেন নি ? বটে ? একদিন—সেই—তাড়ালেন না | আজ আবার বলা হচ্ছে— । পরে আমার মুরের নকল করতে চেষ্টা করে—‘ওতে আমার মনে কষ্ট দেওয়া হয়—কি মানুষ আপনি ! হি-হি-হি-হি— আমি মুগ্ধদৃষ্টিতে ওর হাসিতে উদ্ভাসিত স্বকুমার লাবণ্যভরা মুখের দিকে চেয়ে রইলাম— চোখ ফেরাতে পারি নে—কি অপূৰ্ব্ব হাসি ! কি অপূৰ্ব্ব চোখমুখের শ্ৰী । যখন চোখ নামিয়ে নিলাম তখন সে আমার বেলুনটা তুলে নিয়ে রুটি বেলতে বসে গিয়েছে। সেদিন ও যখন চলে যায়, বোকের মাথায় অগ্রপশ্চাৎ না ভেবেই ওকে আবার বললাম—এ রকম আর এস না, হিরণ। না, সত্যি বলছি তুমি আর এস না। মনকে খুব দৃঢ় ক’রে নিয়ে কথাটা বলে ফেলেই ওর মুখের দিকে চেয়ে আমার বুকের মধ্যে যেন একটা তীক্ষ তীর খচ করে বিধলো। দেখলাম ও বুঝতে পারে নি আমি কেন একথা বলছি—কি বোধ হয় দোষ করে ফেলেছে ভেবে ওর মুখ বিবর্ণ হয়ে গিয়েছে উদ্বেগ ও ভয়ে । আমার মুখের দিকে একটুখানি চেয়ে রইল—যদি মুখের ভাবে কারণ কিছু বুঝতে পারে। না বুঝতে পেরে যাবার সময় দেখলাম শুষ্ক বিবর্ণ মুখে বললে—আমায় তাড়িয়ে দিলেন তো ? এই দেখুন—তাড়ালেন কি না । দুঃখে আমার বুক ফেটে যেতে লাগল। নিমগাছটার তলা দিয়ে ও ওই যাচ্ছে, এখনও বেশী দূর যায় নি, ডেকে দুটাে মিষ্টি কথা বলব ? ছেলেমানুষকে একটু সাত্বনা দেব ? ডাকলুম শেষটা না পেরে —শোনো ও হিরণ—শোনে— ও দাড়াল না—শুনেও শুনলে না। হন হন ক’রে হেঁটে বাড়ি চলে গেল। পরদিন খুব সকালে উঠে বারান্দাতে বসে ব্রাউনিঙের A Soul's Tragedy পড়ছি—হিরণ এসে দাড়িয়ে বললে—কি কচ্ছেন ? —এস এস হিরণ। কাল তোমাকে ডাকলাম রাত্রে, এলে না কেন ? তুমি বড় একগুঁয়ে মেয়ে—একবার শোনা উচিত ছিল না কি বলছি ? মুখরা বালিকা তখন নিজমুৰ্ত্তি ধরলে। বললে—আমি কি কুকুর নাকি, দূর দূর করে তাড়িয়ে দেবেন, আবার তু করে ডাকলেই ছুটে আসব ? আপনি বুকি মনে ভাবেন আমার শরীরে ঘেন্না নেই, অপমান নেই—না ? আমি বলতে এলাম সকালবেলা যে আপনার পাঠশালায় আমি পড়তে আসব না —ম অনেক দিন আগেই বারণ করেছিল—তবুও আসতাম, তাদের কথা না শুনে। কিন্তু যখন আপনি কুকুর-শেয়ালের মত দূর করে তাড়িয়ে— ওর চোখে জল ছাপিয়ে এসেছে—অথচ কি তেজ ও দপের সঙ্গে কথাগুলো সে বললে । আমি বাধা দিয়ে বললাম—আমায় ভুল বুঝে না, ছিঃ হিরণ—আচ্ছ, চেচিও না বেশী, কেউ শুনলে কি ভাববে। আমার কথা শোন–রাগ করে না, ছিঃ ! 哆 হিরণ দাড়াল না এক মুহূৰ্ত্তও। অতটুকু মেয়ের রাগ দেখে যেমন কৌতুক হ’ল, মনে তেমনই অত্যস্ত কষ্টও হ’ল । কেন মিথ্যে ওর মনে কষ্ট দিয়েছি কাল ? আহ, বেচারী বড় দুঃখ ও আঘাত পেয়েছে। আমার জ্ঞান আর হবে কবে ? ছেলেমানুষকে ও-কথাটা ও ভাবে