পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/১৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

〉8や বিভূতি-রচনাবলী দেখিও না বলে দিচ্ছি, ভাল হবে না। ওই রয়েছে মুখুয্যেরা, ভট্চাযিার, জিজ্ঞেস কর গিয়ে । ওই মেয়ে ওই পাঠশালার মাস্টার-ছোকরার কাছে রাত বারোটা অবধি কাটিয়ে আসে—রোজ তিনশ তিরিশ দিন। সারা রাত্তিরও থাকে এক এক দিন। বলুক ও মেয়েই বলুক, সত্যি না মিথ্যে । ভেবেছিলুম কিছু বলব ন—মরুক গে, যার আঁস্তাকুড়, সেই গিয়ে ঘাটুক, না ব’লে পারলাম না। কে ও মেয়েকে ঘরে জায়গা দিয়ে কালকে আবার একটা হাঙ্গামা বাধাতে যাবে ? আমি এতক্ষণ চুপ করে ছিলুম, কথা বলি নি—কোন পুরুষমানুষ উপস্থিত ছিল না বলে। চেঁচামেচি শুনে আচার্ধি-মশায়, সাতকড়ি ও সনাতন রায় ঘটনাস্থলে এসে দাড়াতেই আমি এগিয়ে গিয়ে বললুম—আপনারা আমার মায়ের মত—আপনাদের কাছে একটা অনুরোধ, হিরণকে এ ঝগড়ার মধ্যে মিথ্যে আনবেন না। ও আমার ছাত্রী, ছেলেমানুষ, আমার কাছে যায় সন্ধ্যেবেলা গল্প শুনতে—কোনদিন পড়েও । রাত নটা বাজতেই চলে আসে। একটা নিষ্পাপ নিরপরাধ মেয়ের নাম এ-সবের সঙ্গে না জড়ানোই ভাল। মা, আপনি ওকে বাড়িতে নিয়ে যান । এতে ফল হ’ল উলটো। ঝগড়া না থেমে বরং বেড়ে উঠল। মজুমদার মশায়ের দুই ছেলে ও ছোট ভাই এসে মজুমদার-গিল্পীকে বকবকি করতে লাগল—তিনি কেন ওপাড়া থেকে এসে এই-সব ছেড়া ল্যাঠার মধ্যে নিজেকে জড়াতে যান ? এ বয়সেও তার জ্ঞান যদি না হয় তবে আর কবে হবে “তিনি চলে আমুন বাড়ি । এ-পাড়ার ব্যবস্থা এ-পাড়ার লোকে বুঝবে, তিনি কেন মাথাব্যথা করতে যান—ইত্যাদি । যাকে নিয়ে এত গোলমাল, সে ভয়ে ও লজ্জায় কাঠ হয়ে দাড়িয়েই আছে ওদের বাড়ির সদর দরজায়। ওর চোখে একটা দিশেহারা ভাব, লজ্জার চেয়ে চোখের চাউনিতে ভয়ের চিহ্নই বেশী । ওর সেই কথাটা মনে পড়ল—জানেন মাস্টার মশায়, আমায় সবাই ভয় করে, সবাই মানে এ পাড়ায়—আমার সঙ্গে লাগতে এলে দেখিয়ে দেব না মজা ? বেচারী মুখর হিরন্ময়ী । শেষ পর্য্যস্ত কৈলাস মজুমদারের স্ত্রী ওকে না নিয়েই চলে গেলেন। তার দেওর ও ছেলেরা একরকম জোর করেই তাকে সরিয়ে নিয়ে গেল । আমি তখন এগিয়ে গিয়ে বললুম—হিরণ, তুমি কিছু ভেবে না। আমি এতক্ষণ দেখছিলাম এর কি করে। যে ভয়ে তোমাকে ডাকতে পারি নি, সে ভয় আমার কেটে গিয়েছে। তুমি একটু একলা থাক—আমি কাওরাপাড়া থেকে মোহিনী কাওরাণীকে ডেকে আনছি। সে তোমার ঘরের বারান্দাতে শোবে রাত্রে । তাহ’লে তোমার রাত্রে একা থাকবার সমস্যা মিটে গেল। আর এক কথা—তুমি রান্না চড়িয়ে দাও ; চাল-ডাল সব আছে তো ? কাওরাপাড়া থেকে ফিরে আসতে আধ ঘণ্টার বেশী লাগল। মোহিনী বুড়ীকে চার আনা পয়সা দিয়ে রাত্রে হিরণদের বাড়িতে শোবার জন্য রাজী করিয়ে এলুম। ফিরে এসে দেখি দালানের চৌকাঠে বসে হিরন্ময়ী হাপুম নয়নে কাদছে। অনেক ক’রে বোঝালুম। বড় কষ্ট হ’ল ওকে এ অবস্থায় দেখে। বললে—মার আর দিদির কি হবে মাস্টার মশায় ? আপনি কালই বাবাকে একটা চিঠি লিখে দিন। ওদের ফাঁসি হবে না তো ? হেসে সাত্বনা দিলাম। বললাম—রাধ হিরণ। খাওয়াদাওয়া কর। কিছু ভেবে না—আমি কাল রাণাঘাট যাব। ভাল উকীল দিয়ে জামিনে খালাস ক’রে নিয়ে আসবার চেষ্টা করব, ভয় কি ? ছিরণ কিছুতেই রাখতে চায় না—শেষে বললে—আপনিও এখানে খাবেন কিন্তু । ঠিক