পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/১৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ꮌ©b← বিভূতি-রচনাবলী বাড়ি আসিয়া কথাটা ভাবিলাম । সাত আট বছর ডাক্তারী করিয়া তো দেখা গেল পেটের ভাত জুটানো দায়—তবুও একটা বাধা চাকুরি করিলে, মাস গেলে যত কমই হোক, কিছু হাতে আসিবে। খবর লইয়া জানিলাম, মকরন্দপুরের শ্ৰীনাথ দাস ঐ পাঠশালার সেক্রেটারী। পরদিন সকালে রওনা হইলাম মকরনপুরে। মকরনপুর এখান হইতে সাত আট ক্রোশের কম নয়। সকালে স্নান সারিয়া দুটি চাল গালে দিয়া জল খাইয়া বাহির হইলাম। মকরনপুর কোন দিকে আমার ঠিকমত জানা ছিল না, পলাশপুর ছাড়াইয়া অম্বিকাপুরের কলুবাড়ির কাছে যাইতে কলুরা বলিয়া দিল বিটুকিপোতার খেয়া পার হইয়া নকফুলের মধ্য দিয়া গেলে, দেড় ক্রোশ রাস্ত কম হইতে পারে। সকাল আটটার মধ্যে খেয়া পার হইলাম। একটি ছোট ছেলে আমার সঙ্গে এক নৌকায় পার হইল। মাঠের মধ্যে কিছুদূর গিয়া সে একটা বটগাছের তলা দেখাইয়া বলিয়া দিল—ঐ গাছতলা দিয়ে চলে যান বাবু, বা দিকে নকফুলের রাস্তা। রোদ বেশ চড়িয়াছে। ছোট একটা থাল হাটিয়া পার হইয়া বড় একটা আমবাগানের ভিতরে গিয়া পড়িলাম। এ সব অঞ্চলের আমবাগান মানে গভীর জঙ্গল । তার মধ্যে অতি কষ্টে পথ খুজিয়া লইয়া বাগানটা পার হইয়া যাইতেই একটা কোঠাবাড়ি দেখা গেল। ক্রমে অনেকগুলি দালান কোঠা পথের ধারে দেখা যাইতে লাগিল। অধিকাংশই পুরাতন, প্রাচীন কাৰ্ণিলে দেওয়ালে বট-অশ্বখের চারা গজাইয়াছে। গ্রামখানা ছাড়াইয়া মাঠের মধ্যে একটা বটগাছের ছায়ার কিছুক্ষণ বসিয়া রহিলাম। পিপাসা পাইয়াছে। ভাবিলাম, নকফুলে কাহারও বাড়ি জল চাহিয়া খাইলেই হইত। এদিকে শুধুই মাঠ, নিকটে আর কোন গ্রামও তো নজরে পড়ে না । পুনরায় পথ হাটতে লাগিলাম। পথে সবই চাষীদের গা পড়িতে লাগিল। ব্রাহ্মণ মানুষ, যেখানে সেখানে তো জল খাইতে পারি না ! সুন্দরপুর, চাতরা, নলদি, মামুদপুর 缘 蛤 তারপরেই পড়িল আর একটা মাঠ। বেলা তখন দুপুর ঘুরিয়া গিয়াছে। কিছু খাইতে পাইলে ভালই হইত—পেট জলিয়া উঠিল । আপাতত: জল খাইলেও চলিত। ডিস্ট্রিক্ট বোর্ড কি ছাই এ দিকে কোথাও একটা টিউব-ওয়েলও দেয় নাই কোন গ্রামে ? মাঠের মধ্যে কোথাও কি একটা পুকুর নাই ? মেটে রাস্তায় হাটিয়া যখন নদীর ধাবে পৌছিলাম, তখন সন্ধ্যা হইয়া গিয়াছে। পৌছিয়া দেখি খেয়াঘাট কচুরিপানায় বুজিয়া গিয়াছে, খেয়ার নৌকাখানি ডুবানো অবস্থায় এপারে বাধা। কোনও জনপ্রাণী নাই । কি বিপদ ! এখন পার হওয়ার কি করি ? নিকটে একটা চাষা গী। সেখানে খোজ লইয়া জানিলাম, কচুরিপানায় ঘাট বুজিয়া যাওয়ায় সেখানকার খেয়া আজ মাসখানেক যাবৎ বন্ধ। আরও ক্রোশখানেক উজানে খালিশপুরের ঘাটে খেয়া পড়িতেছে। এই অবস্থায় মাঠ ভাঙিয়া এক ক্রোশ নদীর ধারে ধারে খালিশপুর পর্যন্ত যাওয়াতে দেখিতেছি বড় কষ্ট ! পুনরায় জিজ্ঞাসা করিয়া জানিলাম—পোয়াটাক পথ গিয়া একটা বড় শিমুলগাছের নীচে নদী হাটিয়া পার হওয়া যায়। অন্ধকারে আধ মাইল হাটির নদীর পারে একটা শিমূল গাছ দেখা গেল বটে, কিন্তু জল লেখানে বিশেষ কম বলিয়া মনে হইল না। জলে তো নামিলাম, জল ক্রমে হাটুর উপর