পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/১৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

किन्नद्र मज्ञ S&సి ছাড়াইয়া কোমরে উঠিল। কোমর হইতে বুক, বুক হইতে গলা। কাপড়-জামা ভিজিয়া স্থাত, হইরা গেল—তখনও জল উঠিতেছে—নাকে আসিয়া যখন ঠেকিল, তখন পায়ের বুড়ো আঙুলে ভর দিয়া ডিঙি মারিয়া চলিতেছি । অন্ধকার হইয়া গিয়াছে—ভয় হইল একা এই অন্ধকারে অজানা নদী পার হইতে কুমীর না ধরে । বড় কুমীর না আমুক, দুই একটা মেছে কুমীরেও তো গুতাট-আসটা দিতে পারে! কোন রকমে ওপারে গিয়া উঠিলাম। কোন দিকে লোকালয় নাই, একটা আলোও জলে না এই অন্ধকারে । একটা জায়গায় মাঠের মধ্যে দুই দিকে রাস্তা গিয়াছে। মকরদপুরের রাস্তা কোন দিকে—ডাইনে না বায়ে ? কে বলিয়া দিবে, জনমানবের চিহ্ন নাই কোথাও । ভাগ্য আবার এমনি, ভাবিয়া চিন্তিয় যে পথটি ধরিলাম, সেইটিই কি ঠিক ভুল পথ । অধিক্রোশ তিনপোয়া পথ ইটার পরে এক বাগদীবাড়িতে জিজ্ঞাসা করিয়া জানিলাম—আমি তিনপোয় পথ উন্টোদিকে আসিয়া পড়িয়াছি। যাওয়া উচিত ছিল ডাইনের পথে, আসিয়াছি বায়ের পথে । আবার তখন ফিরিয়া গিয়া সেই পথের মোড়ে আসিলাম । সেখান হইতে ডাইনের পথ ধরিলাম। এইবার পথে বিষম জঙ্গল । বড় বড় আমবাগান, বাশবন আর ভয়ানক আগাছার জঙ্গল । আমি জানিতাম, এখানে খুব বাঘের ভয় । দিনমানে গরু-বাছুর বাঘে লইয়া যায়— একবার আমি একটা রোগীর চিকিৎসা করি, তাহার কাধে গোবাঘায় থাবা মারিয়াছিল। ভীষণ অন্ধকার—রাস্তা হাটা বেজায় কষ্ট, পাকা আম পড়িয়া পথ ছাইরা আছে—এ সব অঞ্চলে এত আম যে আমের দর নাই, তলায় পড়া আম কেউ একটা কুড়ায় না। অন্ধকারে আমের উপর দিয়া পা পিছলাইয়া যাইতে লাগিল । আম তো ভাল, সাপের ঘাড়ে পা দিলেই আমার ডাক্তারলীলা অচিরাৎ সাঙ্গ করিতে হইবে, তাই ভাবিতেছি । অতি কষ্ট্রে মকরন্দপুর পৌছিলাম, রাত নয়টার সময়। সেক্রেটারী শ্ৰীনাথ দাসের বাড়িতে রাত্রে আশ্রয় লইলাম। কিন্তু চাকুরি মিলিল না, যাতায়াতই সার। পরদিন সকালে শ্ৰীনাথ দাস বলিল—এ মাসে নয়, আশ্বিন মাস থেকে ভাবছি লোক নেব। ইস্কুলের অবস্থা ভাল নয়। ডিস্ট্রিক্টবোর্ডের সাহায্য আসে মাসে দশ টাকা চার আনা, সেইটিই ভরসা। ছাত্রদত্ত বেতন মাসে ওঠে মোট তের সিকে। দুজন মাস্টার কি করে রাথি ? তা আপনি আশ্বিন মাসের দিকে একবার খোজ করবেন। গেল মিটিয়া। আশ্বিন মাস পর্য্যন্ত খাই কি যে পানখোলা ইউ. পি. পাঠশালার দ্বিতীয় পণ্ডিতের পদের জন্ত বসিয়া থাকিব ! বেতন শুনিলাম পাচ টাকা । হেড পণ্ডিত পান নয় টাকা । সারাদিন হাটিয়া আবার ফিরিলাম পলাশপুরে। সন্ধ্যা হইয়া গেল ফিরিতে। শরীর অত্যন্ত ক্লাস্ত, পাটন টন্‌ করিতেছে। মুজিবর জিজ্ঞাসা করিল—কি হল ডাক্তারবাৰু ? তাহাকে সব বলিলাম, তারপর নিজের অন্ধকার খড়ের ঘরে ঢুকিয়া ভাঙা লণ্ঠনটা জালিলাম। নদীর ঘাট হইতে হাত-মুখ ধুইয়া আসিয়া মাছরটা বিছাইরা শুইরা পড়িলাম। ক্ষুধা খুবই পাইয়াছিল, কিন্তু উঠিয়া রাধিবার উৎসাহ মোটেই ছিল না । গোটাকতক আম খাইয়া রাত্রি কাটিল । অন্ধকারে শুইয়া শুইয়া কত কথা ভাবি । একা এক কাটাইতে হয়, কথা বলিবার মানুষ পাই না, এই হইয়াছে সকলের চেয়ে কষ্ট । ইচ্ছা হয় স্ত্রীকে আনিয়া কাছে রাখিতে। কত কাল তাহাকে দেখি নাই, তাহার একটু সেবা পাইতে সাধ হয়। এই সারাদিন থাটিরা-খুটিয়া আসিলাম, ইচ্ছা হয় কাছে বসিয়া একটু গল্প করুক, দুঃখ-কষ্টের মধ্যেও মুখে থাকিব। কিন্তু আনি কোথা হইতে ? খাওয়াই কি ? হাটতলায় কি ভীষণ অন্ধকার। মাত্ৰ দুখানি দোকান, তাও দোকানীরা বন্ধ করিয়া চলিয়া