পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/১৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Σ\3ο বিভূতি-রচনাবলী গিয়াছে। চারিদিকে বড় বড় গাছপালার অন্ধকারে জোনাকী জলিতেছে, বিলাতী আমূড়া গাছটার বাহুড়ে ডানা ঝটুপটু করিতেছে। গভীর রাত্রি হইয়াছে, কিন্তু গরমে ঘুম আসে না চোখে । কি বিত্র গুমোট । সারারাত্রি ঢুবঢ়াব, শব্দে পাকা অাম পড়িতেছে চারিদিকের আমবাগানে, গুইরা শুইয়া শুনিতেছি। উ, কি একঘেয়েই হইয়া উঠিয়াছে এখানকার জীবন, সকালে উঠিয়া নদীর ধারে একটু বেড়াইয়া আসিয়া সেই হাটতলায় ফিরিয়া আসি, বেশীদূর কোথাও যাইতে পারি না, কি জানি রোগী আসিয়া যদি ফিরিয়া যায় । সারাদিন ডিসপেনসারি আগলাইয়া বসিয়া থাকিতে হয় আশায় আশায় । মুদি পোড়া আঁখি বসি রসালের তলে ভ্ৰান্তিমদে মাতি ভাবি পাইব পাদপদ্ম । কাপে হিয়া দুরু দুরু করি— আর তা ছাড়া যাই বা কোথায় ? চাষা গ, কোন ভদ্রলোকের বাড়ী নাই যে বসিয়া গল্পগুজব করি। ঘুরিয়া ফিরিয়া সেই আমার ফুটা খড়ের ঘরের ডিসপেন্সারি আর মুজিবরের দোকান, দোকান আর ডিসপেন্সারি। কোন কোন দিন সন্ধ্যার দিকে পিপিলিপাড়ার বিলের ধারে বেড়াইতে গিয়া দেখি বাগদীরা কি করিয়া ডোঙ্গায় উঠিয়া কোচ ছুড়িয়া কই মাছ মারিতেছে। অন্ধকার দেখিয়া দুটো হয়তো শাক তুলিয়াও আনি কোন কোন দিন। একঘেয়ে আম-ভাতে ভাত অখণ্ড প্রতাপে রাজ্য চালাইতেছে তো বৈশাখ মাস হইতেই—কতদিন আর ভাল লাগে ? আমার নামের কপাল নয়। কাল ওপাড়ার বিষ্ণু কলুর বড় ছেলেকে সন্ধ্যার পরে ঘানিঘরের দরজায় সাপে কামড়াইল, আমি শুনিয়াই ছুটিয়া গেলাম, আমায় কেহ ডাকিতে আসে নাই বটে, কিন্তু কানে শুনিয়া চুপ করিয়া থাকিতে পারি কি করিয়া ? গিয়াই শক্ত করিয়া গোটাকতক বাধন দিলাম, দণ্ঠস্থান চিরিয়া পটাস পারম্যাঙ্গানেট টিপিয়া দিলাম—এমন সময় পাড়ার লোকে ওঝা ডাকিয়া আনিল । ওঝা আসিয়াই আমার বাধন খুলিয়া ফেলিতে হুকুম দিল । আমার নিষেধ কেহই গ্রাহ করিল না। বাঁধন খুলিয়া ঝাড়-ফুক করিতে করিতে রোগী সারিয়া উঠিল। ঝাড়-ফুক সব বাজে, আমার বাধনে আর পটাস পারম্যাঙ্গনেটে কাজ হইয়াছিল—নাম হইল সেই ওঝার। যাক, সে জন্য আমি দুঃখিত নই, একজনের জীবন বাচিয়া গেল, এই আমার যথেষ্ট পুরস্কার । না খাওয়ার কষ্টও সহ করিতে পারি। একঘেয়ে জীবনের কষ্টে একেবারে মারা যাইতে বসিয়াছি। তবুও বসিয়া বসিয়া দিবা স্বপ্নে কাটাইয়া মনের কষ্ট মন হইতে তাড়াই। টাকা পয়সা হাতে হইলে কি করিব বসিয়া তাহাও ভাবি ৷ মুবাসিনীকে লইয়া আসিব, খোকাকে লইয়া আসিব । নদীর ধারে মুজিবর জমি দিতে চাহিয়াছে, সেখানে দুখান খড়ের ঘর তুলিব আপাততঃ । বাড়ির চারিধারে ছোট একখানা ফুলবাগান করিব, সন্ধ্যাবেলা আধফুটন্ত বেলকুঁড়ি এই গ্রীষ্মের সন্ধ্যায় রেকবি করিয়া তুলিয়া আনিয়া কিছু ঘরে কিছু মুবাসিনীর খোপায় পরাইয়া দিব। এখানকার তহশিলদারকে বলিয়া কিছু ধানের জমি লইর চাষবাস করিব, ঘরে ধান হইলে সচ্ছলতা আপনিই দেখা দিবে। ভাত্র মাসে একদিন ডিসপেন্সারি ঘরে বসিয়া আছি, দেখি যে একটি মেরে হাটতলার বনের মধ্যে জামতলার কি খুজিয়া বেড়াইতেছে। আমার দেখিয়া আমার দিকে চাহিয়া রহিল। বলিলাম—কি খুজিছ ওখানে খুকী ?