পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/১৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাবলী 8ט\כי ভেবেছি। কিন্তু সাত বছরের ছেলে,ভেবে কিছু ঠিক করতে পারতুম না, বা বেশীক্ষণ এসব কথা আমার মনে দাড়াতও না । - দিদিমার কাছে আমি অনেক সময় থাকতুম । তার বাড়ি আমাদের গ্রাম থেকে নৌকার যেতে হয়। অনেকখানি সময় লাগত সেখানে পৌঁছতে। সকালে খেয়ে বার হ'লে সেখানে পৌঁছাবার আগে রোদ রাঙা হয়ে আসত ; বাদুড়ের দল ডান ঝন্টুপটু করে আকাশ দিয়ে উড়ে বাসায় যেত, নদীর জলে নৌকার ধারে ভূস্ভুদ ক’রে শুশুকের ডিগবাজি খেয়ে ডুব দিত। এসব অনেক ছেলেবেলাকার কথা । তখন আমরা থাকতাম আমাদের দেশের বাড়িতে । সেখান থেকে অনেকদিন আমরা চলে এসেছিলুম, আর কখনও যাই নি। দেশে এখন আর আমাদের বাড়িঘর নেই, ম্যালেরিয়ায় জনহীন শ্রীহীন হয়ে গিয়েছে শুনেছি। বহুদিন কলকাতার বাসিন্দা, এখন সেসব জায়গায় যেতে ভয় করে, বিশেয করে এখন যখন বয়স হয়েছে, সাবধানে থাকাই ভাল । দেশের বাড়ির সঙ্গে মায়ের স্মৃতি জড়ানো । যখনই দেশের বাড়ির ডালিম গাছটা, তার পাশে লম্ব পেপে গাছটা, তার পাশে পুরোনো পাতকুয়ো ও গোয়ালঘরটার ছবি মনে আসে, সঙ্গে সঙ্গে আমনি মনে মাসে আমার মায়ের খুব অস্পষ্ট একটি ছবি। ওদের সঙ্গে মা যেন জড়ানো আছেন। কি ভালোই বাসতুম মাকে ! জীবনে অত ভালো কাউকে বাসিনি, বাসতে পারবও না। মায়ের সম্বন্ধে আমার অতি শৈশবকালের যে ছবিটি জাগে, তাতেও দেথি ঠাকুরমা মাকে অনেক কষ্ট দিতেন, মাকে শক্ত কথা বলতেন অকারণে। ছেলেমানুষ হ'লেও আমি তা বুঝতুম ; বুদ্ধি দিয়ে না বুঝলেও শিশুর ইন্সটিংক্ট দিয়ে বুঝতুম ; তার একটা মস্ত কারণ, মার প্রতি ছিল আমার গভীর দরদ ও সহানুভূতি, একই রক্ত একই মাংস আমার গায়ে। আমার চেয়ে মায়ের দুঃখ বুঝবে কে ? একদিনের কথা আমার মনে হয় অস্পষ্ট একখানা ছবির মত । আমাদের বাড়ির সদর দরজার সামনে কিছু দূরে আর একজন কাদের বাড়ি ছিল। একটা খুব বড় বাঁকড়া লিচু গাছ ছিল তাদের বাড়ির বাইরের উঠানে। বিকেলবেলাটায় আমি ও আরও অনেক ছেলে লিচুতলায় খেলছিলুম। এমন সময়ে আমাদের বাড়ির সদর দরজায় দাড়িয়ে মা ডাক দিলেন, ভাঙ্গ থাবার খাবি यांद्र । খেলা ফেলে ছুটে গেলুম খেতে । সদর দরজার ক্রেমে মার ছবিটা আজও বেশ মনে হয়। দুদিকের কাঠে হাত দিয়ে দাড়িয়েছেন, পরনে সাদা শাড়ি, মুখে হাসি। দরজার কবাট জোড়া সেকেলে ধরনের মোট পেরেকের গুল-বসানো। পাশেই ছোট একটি চালাঘরে থড়-বিচালি থাকত । মা খেতে দিলেন মুড়ি মেখে । বেতের ছোট ধামিতে মুড়ি নিয়ে খেতে বসেছি, এমন সময় নদীর ঘাট থেকে ঠাকুরমা ফিরলেন জল নিয়ে, এবং আমার হাতে মুড়ির ধামি দেখেই মাকে বকুনি ও গালাগালি শুরু করলেন । ঠিক কথাগুলো মনে নেই, কিন্তু তার মোট মৰ্ম্ম এই যে, বাড়িতে ওবেল পুরুভঠাকুরের নিমন্ত্রণ ছিল একাদশী ব’লে, তিনি রুটি খেয়েছিলেন, তার পাতে রুটি তরকারি রয়েছে। সেই পাতের রুটি তরকারি আমার জন্তেই ঢাকা দিয়ে রেখে দিয়েছেন ঠাকুরমা । ঘাট থেকে আসতেও এমন কিছু দেরি হবে না, তখন এরই মধ্যে মুড়ির ঘড়ী পেড়ে ছেলেকে লোহাগ করে