পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Wy বিভূতি-রচনাবলী দিতে দরজা থেকে এগিয়ে গিয়ে ঠাকুরকে অভ্যর্থনা করে নিয়ে এলেন । মেয়েরা শাখ বাজাতে লাগলেন। ধূপধুনোর ধোয়ার ঠাকুরঘরের বারান্দা অন্ধকার হয়ে গেল। আমি এ দৃপ্ত কখনো দেখিনি—আমার ভারি আনন্দ হ’ল, ইচ্ছে হ’ল আর একটু এগিয়ে গিয়ে ঠাকুরঘরের দোরে দাড়িয়ে দেখি, কিন্তু ভয় হ’ল পাছে জ্যাঠাইমা বকুনি দেন, বলেন—তুই এখানে দাড়িয়ে কেন ? কি কাপড়ে আছিস তার নেই ঠিক, যা সরে যা । এমন অনেকবার বলেচেন—তাই ভয় হয় । বেলা একটা পৰ্য্যন্ত আমাদের পেটে কিছু গেল না। বাড়ির অন্তান্ত ছেলেমেয়েদের কথা স্বতন্ত্র—তাদেরই বাড়ি, তাদেরই ঘরদোর । তারা যেখানে যেতে পারে, আমরা তিন ভাইবোনেই লাজুক, সেখানে আমরা যেতে সাহস করি না, কারুর কাছে খাবার চেয়েও খেতে পারিনে। যা ব্যস্ত আছেন নানা কাজে, অবিশুি হেঁসেলের কাজে তাকে লাগানো হয় না এ বাড়িতে, তা আমি জানি । কিন্তু বিয়ের কাজ করতে তো দোষ নেই! বাড়ির অন্যন্ত মেয়ের কোনদিনই আমাদের খাওয়াদাওয়ার খোজ করেন না, আজ তো সকলেই মহাব্যস্ত । বেলা যখন দেড়টা আন্দাজ, রান্নাঘরের দিকে একটা গোলমাল ও জ্যাঠাইমার গলার চীৎকার শুনে ব্যাপার কি দেখতে গেলাম ছুটে । গিয়ে দেখি, রান্নাঘরের কোণে ছেচ তলার কাছে দাদা একটা লাউপাতা হাতে দাড়িয়ে । জ্যাঠাইমা বকচেন—ওই ঝাড় তো, আর কত ভাল হবে তোমাদের ? এখনো বামুন-ভোজন হ’ল না, দেবতার ভোগ রইল পড়ে, উনি এসেছেন ভোগের আগে পেরসাদ পেতে,-দেবতা নেই, বামুন নেই, ওর শুয়োর-পেট পোরালেই আমার স্বগগে ঘণ্টা বাজবে যে! বুড়ো দামড়া কোথাকার—ও সব খিরিস্টান চাল এ বাড়িতে চলবে না বোলে দিচ্ছি, মুড়ো বাট মেরে বাড়ি থেকে বিদেয় ক'রে দেবো জানো না ? আমার বাড়ি বসে ও সব অনাচার হবার জো নেই, যখন করেচ তখন করেচ । মা কোথায় ছিলেন আমি জানিনে। পাছে তিনি শুনতে পান এই ভয়ে দাদাকে আমি সঙ্গে করে বাইরে নিয়ে এলাম। দাদা লাউপাতাটা হাতে নিয়েই বাইরে চলে এল । আমি বললাম—ওখানে কি কচ্ছিলে ? দাদা বললে—কি আবার করবো? ভূবনের মা কাকীমার কাছে দুখান৷ তিলপিটুলি ভাজা চাইছিলাম—বডড থিদে পেয়েচে তাই । জ্যাঠাইমা শুনতে পেয়ে কি বকুনিটাই— ব’লেই লজ্জা ও অপমান ঢাকবার চেষ্টায় কেমন এক ধরনের হাসলে। হয়তো বাড়ির কোন ছেলেই এখনে খায়নি, কিন্তু আমরা জানি দাদা থিদে মোটে সহ করতে পারে না, চা-বাগানে থাকতেও ভাত নামতে-না-নামতে সকলের আগে ও পিড়ি পেতে রান্নাঘরে খেতে বসে যেত। বয়সে বড় হ'লে কি হবে, ও আমাদের সকলের চেয়ে ছেলেমানুষ । আজকার সমস্ত অনুষ্ঠানের উপর আমার বিতৃষ্ণ হ’ল । এদের দয়ামায়া নেই, এই যে ঠাকুর-পূজোর ধুমধাম, এর যেন কোথায় গলদ আছে। কোথায়—ত বোঝা আমার বুদ্ধিতে কুলোয় না, কিন্তু গোটা ব্যাপারটাই যেন কেমন মনের সঙ্গে খাপ খেলো না আদৌ। আর কিছুদিন পরে একটু বয়স হলে আমি বুঝেছিলাম যে, এদের ভক্তির উৎসের মূলে এদের বিষয়-বুদ্ধি ও সাংসারিক উন্নতি। ভগবান এদের উন্নতি করেচেন, ফসল বাড়াচ্চেন, মান খাতির বাড়াচ্চেন—এরাও ভগবানকে তোয়াজ করচেন—ভবিষ্যতে আরও যাতে বাড়ে । প্রতি পূর্ণিমার ঘরে সত্যনারায়ণ পূজো হয়, সংক্রাস্তিতে সংক্রাস্তিতে দুটি ব্রাহ্মণ খাওয়ানো হয়, শুধু তাই নয়—একটি গরিব ছাত্রকে জ্যাঠাইম বছরে একটি টাকা দিয়ে থাকেন বই কেনার জন্তে । শ্রাবণ মাসে র্তাদের আবাদ থেকে বছরের ধান, জালাভরা কই মাছ, বাজরাভরা