পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/১৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাবলী טף צ এইবার সেই মামা নিজে এগিয়ে এসে মেয়ের ভাইকে বললে—আপনার সঙ্গে একটা কথা আছে, একটু এদিকে আসুন । মেয়ের ভাই তার সঙ্গে এক পাশে গেল। দুজনে কি কথা হল জানিনে, ভাই ফিরে এসে আমার দিকে চেয়ে বললে—ইনি রাণীর মামাশ্বশুর। ইনি বলচেন রাণীর গায়ের গহনাগুলো দিতে ওঁর হাতে । আপনি কি বলেন ? এই কথাতে মামাশ্বশুরের সঙ্গী সেই আর একজন চোয়াড়মত লোক চটে গেল। বল্লে—উনি কি বলবেন ? মেয়ের মামাশ্বশুর আর দেওর নিজে এসে গহনা চাইছেন, উনি এর মধ্যে কি বলবেন ? কতকগুলো ছেলেছোকরা সমস্বরে কি একটা কথা বলতে গেল—আমি ওদের থামিয়ে দিয়ে মামাশ্বশুরকে বললুম—আপনি গহনা এখন চান কেন ? মামাশ্বশুর বল্লে–গহনা বৌমার গা থেকে হারিয়ে যেতে পারে, এমন গোলমাল আর ভিড়ের মধ্যে । আমাদের কাছে এখন রেখে দিই, এর পরে আবার দেবো— বললুম—ন, গহনা আমরা দিতে পারি নে। মামাশ্বশুর মহা রুখে উঠলো। —দিতে পারেন না ? আপনি কে মশাই ? আপনার কি অধিকার আছে দেবার—ন দেবার ? আমার বৌমার গহনা আমি নিতে এসেচি, আপনি যে বড়— পেছন থেকে একজন ছোকরা বললে—ও: ভারী বৌমা বৌমা এখন, বড় দরদ দেখাতে এসেচেন বৌমার ওপর—এতদিন কোথায় ছিলেন মশাই ? কেশবের অমুখের সময় কোনদিন তে চুলের টিকিও দেখি নি— মামাশ্বশুর বললে—মুখ সামলে কথা কও বলচি— পেছনের সেই চোয়াড় লোকটা আস্তিন গুটিয়ে এগিয়ে এসে বললে—আলবৎ আমরা গহনা নিয়ে যাবে।—আমাদের বৌয়ের গহনা আমরা নিয়ে যাবো তাতে কে কি করবে ? একটা হৈ হৈ বাধবার উপক্রম হয়ে উঠলো, মামাশ্বশুরের ও তার সঙ্গীর এই কথায় আমি আমাদের দলের ছোকরাদের থামিয়ে দিয়ে বললুম—আপনাদের গহনা আপনারা নিয়ে যাবেন কি না সে তর্ক আমরা করতে আসি নি, কিন্তু একটা কথা জিজ্ঞেস করি, আপনাদের ঘরেরই তো বে, ছেলেমানুষ, কঁদিচে, এই কি সময় ওর গা থেকে গহনা খুলে নেবার ? এখন আমরা তা হতে দিতে পারিনে । মামাশ্বশুর বল্লে—হতে দিতে পারেন না কি মশাই ? আপনি যে বডড লম্বা লম্বা কথা বলচেন দেখতে পাই । হতে দিতে হবে—আমরা গহনা নিয়ে যাবোই, আপনি কি করবেন ? আমার ভয়ানক রাগ হয়ে গেল লোকটার ইতরামি দেখে। বললুম—আপনারা বলচেন আপনাদের বেীমা, এই বুঝি তার ওপর আপনাদের দরদের পরিচয় ? গহনা নিতে এসেচেন এ সময় গা থেকে খুলে ? গহন যদি আমরা না দিই, কি করবেন আপনারা ? ওরা তিনজনেই আস্ফালন করে বলে উঠলো—গহনা জোর করে নিয়ে যাবে, আপনাদের কি অধিকার আছে গহনা আটকাবার ? কে আপনার ? আলবৎ গহনা আমরা নিয়ে যাবেএইবার আমাদের ছেলের দল ক্ষেপে উঠলো—তারা সবাই রাণীকে ঘিরে দাড়িয়েচে ততক্ষণ । তারা বললে—কারো সাধ্যি নেই, আমরা এখানে থাকতে আমাদের গায়ের মেয়ের গা থেকে কেউ গহনা ছিনিয়ে খুলে নিয়ে যায়—আমুক কে এগিয়ে আসবে দেখি— একটা তুমুল হৈ চৈ ও বিত্র কোলাহলের স্বষ্টি হোল তারপরে। সকলেই একসঙ্গে কথা বলতে লাগলো—লোক জমে গেল চারিধারে—সকলেই জিজ্ঞেস করে, ব্যাপারটা কি ? ওরাও চীৎকার করে—