পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/১৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

➢bሥ8 বিভূতি-রচনাবলী সঙ্গে, সে মারা গেল—এই তো ? ও ঢের শুনেছি। তারানাথ হাসিয়া বলিল—ঢের শোন নি ! শোন–কিন্তু বিশ্বাস যদি না কর তাও আমার বলবে। এরকম গল্প বানিয়ে বলতে পারলে একজন গল্পলেখক হয়ে যেতুম হে!"দু-একজন নিতান্ত অন্তরঙ্গ বন্ধু ছাড়া একথা কারও কাছে বলিনি । ঠিক এই সময় বাড়ির ভিতর হইতে তারানাথের বড় মেয়ে চারু ওরফে চারি দু পেয়ালা গরম চা ও দুখানি করিয়া পরোটা ও আলুভাজা আনিল । চারি দশ বছরের মেয়ে, তারানাথের মতই গায়ের রং বেশ উজ্জল, মুখ-চোখ মন্দ নয়। আমায় বলিল—কাকাবাবু, লেসের কাপড়ের ছবিটা আনলেন না ? চারির কাছে কথা দিয়া রাখিয়াছিলাম, ধৰ্ম্মতলার দোকান হইতে তাহার উল-বোনার জন্য একটা ছবির ও প্যাটানের নকৃশা কিনিয়া দিব । বলিলাম—আজ ফুটবলের ভিড় ছিল, কাল এনে দেবে ঠিক । চারি দাড়াইয়া ছিল, তারানাথ বলিল—যা তুই চলে যা, দুটাে পান নিরে আয়— মেয়ে চলিয়া গেলে আমার দিকে চাহিয়া বলিল—ছেলেপিলের সামনে সে-সব গল্প-চা-ট খেয়ে নাও, পরোটাখানা—না না, ফেলতে পারবে না, ইয়ং ম্যান তোমরা এখন—খাওয়ার বেলা অমন—ওই বৃষ্টির জলেই হাত ধুয়ে ফেলো— চা পানের পরে তারানাথ বলিতে আরম্ভ করিল : বীরভূমের শ্মশানের যে পাগলীর অদ্ভুত কাও সেবার গল্প করেছিলাম, তার ওখান থেকে তো চলে এলাম সেই কাণ্ডের পরেই। কিন্তু তন্ত্রশাস্ত্রের প্রতি আমার একটা অত্যন্ত শ্রদ্ধা হয়ে গেল তার পর থেকে । নিজের চোখে যা দেখলুম, তা তো আর বিশ্বাস না করে পারি না। এটা পাগলীর কথা থেকে বুঝেছিলুম, পাগলী আমায় ইন্দ্ৰজাল দেখিয়েছিল নিম্নতন্ত্রের সাহায্যে। কিন্তু সে তো ব্ল্যাক ম্যাজিক ছাড়া উচ্চতন্ত্রের কথাও বলেছিল। ভাবলাম দেখি না কি আছে এর মধ্যে। গুরু খুঁজতে লাগলুম। খুজলে কি হবে, ও-পথের পথিকের দর্শন পাওয়া অত্যন্ত দুৰ্ল্লভ । এই সময়ে বহু স্থান ঘুরে বেড়িয়ে আমার দুটি মূল্যবান অভিজ্ঞতা হ'ল। প্রথম, ধুনিজালানো সাধুদের মধ্যে শতকরা নিরানব্বই জন ব্যবসাদার, ধৰ্ম্ম জিনিসটা এদের কাছে একটা বেচাকেনার বস্তু, ক্রেতাকে ঠকাবার বিপুল কৌশল ও আয়োজন এদের আয়ত্তাধীনে। দ্বিতীয়, সাধারণ মানুষ অত্যন্ত বোকা, এদের ঠকানো খুব সহজ, বিশেষতঃ ধর্মের ব্যাপারে। যাক ও সব কথা। আমি ধুনি-জালানো ব্যবসাদার সাধু অনেক দেখলুম, ইন্‌সিওরেন্সের দালাল দেখলুম, দৈব ঔষধের মাদুলি বিক্রেতাকে দেখলুম, সাধুবেশী ভিক্ষুক দেখলুম—সত্যিকার সাধু একটাও দেখলুম না। এ অবস্থায় বরাকর নদীর ধারে শালবনের মধ্যে একটি ক্ষুদ্র গ্রামের সীমায় এক মন্দিরে একদিন আশ্রয় নিয়েছি, শীতকাল, আমি বনের ডালপালা কুড়িয়ে আগুন করবার যোগাড় করতে যাচ্ছি, এমন সময়ে একজন খামবর্ণ, ঋজু ও দীর্ঘাকৃতি প্রৌঢ় সাধু দেখি একটা পুটুলি বগলে মন্দিরে ঢুকছেন। আমি গিয়ে সাষ্টাঙ্গে প্ৰণাম করলুম। সাধুটি বেশ মিষ্টভাষী, বললেন—তুই যে দেখছি বড় ভক্ত ! কি চাস এখানে ? বাড়ি ছেড়ে দেখছি রাগ করে বেরিয়েছিল।